মুক্তিযোদ্ধা হত্যা : যশোরে দুই চরমপন্থীর ফাঁসি কার্যকর

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

চুয়াডাঙ্গা জেলার মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বর হত্যা মামলায় দুই আসামি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাত পৌনে ১২টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সিনিয়র জেল সুপার কামাল আহমেদ।

এর আগে সন্ধ্যা থেকেই কারাগারের আশপাশে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়। রাত ৯টার পর থেকে কারাগারে প্রবেশ করতে থাকেন প্রশাসনের লোকজন। আর বৃহস্পতিবার সকালে মোকিম ও ঝড়ুকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন স্বজনরা।

আদালত ও পুলিশ সূত্র মতে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মন্ডলের মেজ ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেনকে ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দারের বাড়িতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থী কুপিয়ে হত্যা করে। ওই দিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে ঝড়ুসহ তিনজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

মামলার রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিলসূত্রে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এক আসামি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুইজন আসামি আমিরুল ইসলাম ও হিয়ার দণ্ডাদেশ মওকুফ করা হয়। মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে। আজ রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়।

মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি কৃতি খেলোয়াড় হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ভারতের পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলেও তিনি হায়ারে হা-ডু-ডু খেলেছেন।

নিহত মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বরের ছেলে কুমারী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুই আসামির ফাঁসির বিষয়টি কয়েকদিন পূর্বে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছিলেন। সেসময় কবে ও কখন ফাঁসি কার্যকর করা হবে তা জানানো হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসি হয়েছে বলে শুনেছেন।

অপরদিকে ফাঁসির প্রস্তুতি বিষয়ে কয়েকদিন ধরেই চলছিল প্রস্তুতি। চুয়াডাঙ্গা পুলিশের বিশেষ শাখা আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে অবগত করানো হয়। ফাঁসি হওয়ার পর মরদেহ স্বজনরা গ্রহণ করবেন কিনা কিংবা যারা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলমডাঙ্গা পুলিশকে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়।

আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঝড়ুর মরদেহ গ্রহণ করেন তার ছেলে তরিকুল ইসলাম। তিনি উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামে বসবাস করেন। আর মোকিমের মরদেহ গ্রহণ করেন তার ছেলে মখলেছ আলী। তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামে বসবাস করেন।

অন্যদিকে, দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নিহতের স্ত্রী চায়না খাতুন বলেন, এক সময় বছরের পর বছর আমরা চোখের জলে বুক ভাসিয়েছি। আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন। আল্লাহর কাছে হাজার শোকর। খুনি দুইজনের ফাঁসি হয়েছে। এখন খুনির আত্মীয়দের কান্নার পালা।

নিহত মুক্তিযোদ্ধার মেজ ছেলে ইউপি মেম্বর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার নিরাপরাধ পিতার হত্যার বিচার চেয়ে চারমপন্থীদের হুমকি সহ্য করেছি। পিতার হত্যার বিচার পেয়েছি। আমরা খুশি।

হত্যা মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বলেন, একসঙ্গে দুই ভাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। সেই ভাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভাইকে হারিয়ে নীরবে কেঁদেছি। দেরিতে হলেও খুনিদের ফাঁসি হওয়ার সংবাদ শুনে ভালো লাগছে।