#

মিয়ানমারকে সাবমেরিন বিধ্বংসী অত্যাধুনিক হালকা টর্পেডো (টিএএল) ‘শেয়েনা’ দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পেরিয়েছে মাত্র; এরইমধ্যে ভারত আবারও দেশটিকে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে- এবার প্রথমবারের মতো নিজেদের নৌবাহিনীর বহরে থাকা রুশ একটি সাবমেরিন মিয়ানমারকে শিগগির হস্তান্তর করতে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।

একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশীয়ভাবে নতুন করে আধুনিকায়ন বা মেরামত করা কিলো ক্লাসের এই সাবমেরিনটি খুব সম্ভবত এ বছরের মধ্যেই মিয়ানমারে পাঠাবে ভারত।

ভারতীয় নৌবাহিনীর সিন্ধুঘোষ ক্লাসের ডিজেল অথবা বৈদ্যুতিক শক্তির সাবমেরিন, যাকে বলা হয় ‘আইএনএস সিন্ধুভির’ বা ‘এস-৫৮’, এটিই মিয়ানমারকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। আর এই ‘আইএনএস সিন্ধুভির’ হস্তান্তর হলে মিয়ানমার নৌবাহিনী এটি প্রশিক্ষণে ব্যবহার করবে। এছাড়া সামনের বছরগুলোতে মিয়ানমার নৌবাহিনীর নিজস্ব সাবমেরিন হিসেবে ‘এস-৫৮’ দেশটির সামরিক সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেবে বলে কর্তৃপক্ষের আশা।

সংবাদমাধ্যম বলছে, কিলো ক্লাসের এই সাবমেরিনটি ১৯৮০ সালে রাশিয়া থেকে কিনেছিল ভারত। যদিও বর্তমানে সাবমেরিনটিকে আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। ভারতীয় হিন্দুস্থান শিপইয়ার্ড লিমিটেড (এইচএসএল) সাবমেরিনটির আধুনিকায়নের কাজ করছে। অন্ধ্র প্রদেশের কোম্পানিটি সম্ভব এর কাজ শেষের দিকে নিয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে – ২০১৯ সাল শেষ হওয়ার আগেই রুশ সাবমেরিনটিকে পুরো আধুনিকায়ন করা হবে এবং মিয়ানমারকে হস্তান্তর করবে কর্তৃপক্ষ।

ভারতীয় সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, সাবমেরিনটির প্রকৃত নির্মাতা রাশিয়া থেকে এর প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন বা মেরামতের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এরপরই এইচএসএল কোম্পানি সাবমেরিনটিকে দেশীয় পদ্ধতিতে মিয়ানমার নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণের উপযোগী করে তৈরি করতে শুরু করে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত ও মিয়ানমার দু’দেশের মধ্যে একাধিক উচ্চ পর্যায়ের মতবিনিময় বৈঠক হয়ে গেছে। বর্তমানেও হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। এদিকে, প্রতিরক্ষার সার্বিক বিষয় নিয়ে বর্তমানে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ভারত সফর করছেন।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, মিয়ানমার সিনিয়র জেনারেলের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানো, দু’দেশের মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়া এবং প্রশিক্ষণ পর্যালোচনা করা। একইসঙ্গে যৌথ নজরদারি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামুদ্রিক সুরক্ষা জোরদার করা এবং নতুন অবকাঠামোগত বিকাশে মিন অং হ্লাইং এর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

আর এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন বা মিয়ানমারের সামরিক ক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবেই হয়তো দেশটিকে এবার সাবমেরিন দিচ্ছে ভারত।

এর আগে শুক্রবার (১২ জুলাই) মিয়ানমারকে নিজেদের বানানো সাবমেরিন বিধ্বংসী অত্যাধুনিক হালকা টর্পেডো (টিএএল) ‘শেয়েনা’ হস্তান্তর করে ভারত।

মিয়ানমারে টর্পেডো রপ্তানির জন্য ২০১৭ সালে দেশটির সঙ্গে ৩৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল ভারত। এই চুক্তি অনুসারে টর্পেডোর প্রথম চালান মিয়ানমারে পৌঁছে। তবে মিয়ানমারে আসা টর্পেডোর সংখ্যা এবং দেশটির নৌবাহিনীর কোন বহরে প্রযুক্তিটি যোগ হবে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

এই প্রযুক্তির টর্পেডো ভারতীয় নৌবাহিনীর ২৫ ইউনিটে আছে। এর ওজন ২২০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৭৫০ মিলিমিটার ও ব্যাস ৩২৪ মিলিমিটার। এতে উচ্চমাত্রার ৫০ কেজি পরিমাণ বিস্ফোরক ভর্তি থাকে। একইসঙ্গে এর কার্যকরী দূরত্ব সাত কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৫৪০ মিটার পর্যন্ত।

কিন্তু প্রতিরক্ষা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের মিত্রতা এ দুইবারই প্রথম নয়; এর আগেও দেশটিতে অ্যাকোয়াস্টিক ড্রোন, ন্যাভাল সোনারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে নয়াদিল্লি।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন