মিয়ানমার সীমান্ত স্থলমাইন বিস্ফোরণে এবার পায়ের গোড়ালি উড়লো বুনোহাতির

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে স্থলমাইন বিস্ফোরণে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছে একটি বুনোহাতি। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সীমান্ত অতিক্রমের সময় হাতিটি বিস্ফোরণের শিকার হয়।

আহত হাতিটি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফের কর্মীরা। নানা চেষ্টা করেও সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল পর্যন্ত হাতিটির চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। হাতিটি রামুর কচ্ছপিয়ার লম্বাশিয়া পাহাড়ের গহিন অরণ্যে অবস্থান করলেও প্রকাশ্যে আসেনি।

প্রথম দুদিন আহত হাতিটির চারপাশে অবস্থান করছিল আরও পাঁচ-ছয়টি হাতি। কেউ কাছে যেতে চাইলেই তেড়ে আসছিল বুনো হাতির দল। ফলে শত চেষ্টা করেও বন ও ওয়াইল্ড লাইফ কর্মীরা আহত হাতির কাছেও ভিড়তে না পারায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া যায়নি।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আনোয়ার হোসেন সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, প্রাচীনকাল থেকেই বুনোহাতির পাল শূন্যরেখার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের জঙ্গলে চলে যায়। আবার ফিরেও আসে। শনিবারও আগের মতো মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশের সময় সম্ভবত শূন্যরেখার কাছে স্থলমাইন বিস্ফোরণে একটি হাতির সামনের ডান পায়ের গোড়ালি উড়ে গেছে।

খবর পেয়ে সন্ধ্যার আগে ভেটেরিনারি সার্জন ও বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও আহত হাতির শরীরের ইনজেকশন পুশ করতে পারেননি তারা। বনকর্মীরা কয়েকশ গজ দূর থেকে হাতির পায়ে ক্ষত দেখতে পান। কিন্তু কোনোভাবেই হাতিটির কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না।

রামুর বাঁকখালী বনের রেঞ্জ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ডিএফও আনোয়ার হোসেন বলেন, ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে বনকর্মীরা লম্বাশিয়া পাহাড়ের গহিন জঙ্গলে আহত বুনো হাতিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। রামুর গর্জনিয়া বাজার থেকে হাইস্কুল সড়ক দিয়ে লম্বাশিয়ার ওই পাহাড়ে যেতে হয়। বিকেল ৪টার দিকে চকরিয়া ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাত জুলকার নাইনের নেতৃত্বে বনবিভাগ, ওয়াইল্ড লাইফ ও সাফারি পার্কের যৌথ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা আহত হাতিকে কয়েকশ গজ দূর থেকে ট্রাই-এঙ্গোলার দিয়ে ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু সফল হতে পারেননি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় চিকিৎসকসহ দলের সদস্যরা নিরাপদ স্থানে ফিরে আসেন। রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে একইভাবে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।

ঘটনাস্থলে থাকা বনকর্মীরা বলছেন, আহত হাতিটি লম্বাশিয়া বনের ভেতরেই আছে। এর দাঁত আছে দুটো। কয়েকটি হাতি ধাক্কা দিয়ে আহত হাতিটিকে গহিন জঙ্গলে দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আহত হাতিটি ঠিকমতো হাঁটতে পারছিল না।

সোমবার সকাল থেকে হাতিটিকে সেই জায়গায় আর দেখা যায়নি। তবে বন ও ওয়াইল্ড লাইফের কর্মীরা অবজারভেশনে রয়েছেন। সুযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, বহু আগে থেকেই সীমান্তে স্থলমাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী। গত চার মাসে স্থলমাইন বিস্ফোরণে তিন ব্যক্তি নিহত ও পা হারিয়েছেন চারজন।

হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি, অন্যরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। এরআগে স্থলমাইন বিস্ফোরণে হাতি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।