মা-বাবার অনুরোধ উপেক্ষা করে যুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশির ছেলে

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হাবিববুর রহমান হাবিব প্রায় তিন দশক ধরে থাকেন ইউক্রেনে। ওই দেশের এক নারীকেই জীবনসঙ্গী করেছেন। এতদিন সবকিছু ঠিকঠাক চললেও রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে সব ওলটপালট হয়ে যায়। দুই পুত্রের জনক হাবিব এখন বড় ছেলের চিন্তায় দিন পার করছেন। কারণ তার বড় ছেলে মোহাম্মদ তায়িব (১৮) ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।

হাবিব জানান, রাশিয়া যেদিন ইউক্রেনে আক্রমণ করেছে সেদিন সকালেই তায়িব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাসা থেকে চলে যায়। যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য তাকে আমি ও তার মা অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু সে শুনেনি। সে বলেছে, আমি এ দেশে জন্মেছি। শত্রুরা দেশে ঢুকে পড়েছে। জীবন দিয়ে হলেও আমি দেশ রক্ষার প্রচেষ্টা চালাবো। হয় দেশের জন্য লড়াই করে মরবো, না হয় বীরের মতো জীবিত ফিরে আসবো।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ১০টায় (স্থানীয় সময় সোয়া ৬টায়) এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান মোহাম্মদ হাবিব।

তিনি জানান, তার দুই ছেলের মধ্যে তায়িব বড়। ছোট ছেলে মোহাম্মদ কারিমের বয়স সাড়ে ১০ বছর। দেশকে রক্ষায় অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ায় ছেলের যুক্তির কাছে হার মেনে তাকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন বলেও জানান হাবিব।

ইউক্রেন প্রবাসী এই বাংলাদেশি জানান, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেনের নাগরিকরা নিজ জন্মভূমিতে থাকলেও অন্যান্য দেশের নাগরিকরা (যাদের পাসপোর্ট নেই) শরনার্থী হিসেবে পোলান্ডে চলে যান। কয়েকদিন ধরে তারা অধিকাংশ সময় বাঙ্কারে ছিলেন। গত পাঁচ দিনে তারা বাঙ্কারেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখান থেকে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছেন। সরকার থেকেও নাগরিকদের বাঙ্কারেই থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

হাবিব বলেন, বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সবাই বাঙ্কারে নিরাপদে ছিলেন। যা খাবার ছিল তাই ভাগ করে খেয়েছেন। দিনের বেলায় অল্প সময়ের জন্য বাসায় যেতে পেরেছেন। তবে পাঁচদিন পর আজ ইউক্রেনবাসীরা নিরাপদে বাইরে বের হতে পেরেছেন। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আলোচনায় বসায় রাশিয়া আক্রমণ চালায়নি।

মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি ঘুরে ফিরে ছেলে তায়িবের কথা বলছিলেন। ছেলের জন্য ক্ষণে ক্ষণে মন কেঁদে ওঠে বলেও জানান প্রবাসী এই বাংলাদেশি।