মায়ের কারনে জে এস সি থেকে ঝড়ে পড়লাম, বাবার উদ্যোগে সংসার নির্যাতন থেকে মুক্তি

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সোহেল আহমেদ: তখন আমি ৮ ম শ্রেনিতে পড়ি। গ্রাম থেকে এই শহরে এসে বাবা মা দুজনেই কর্মে ব্যস্ত। মা বাবা দুজনেই স্বাস কস্টে ভুগছেন। সংসার, আমাদের ভাই বোনের পড়াশুনা চালানো তাদের পক্ষে বেশ কস্টের।তারপরও তাদের আশার প্রদীপ আমি।সবাই বলে আমার নাকি মাথা ভালো। ক্লাসে প্রথম তিনজনের মধ্যে আমিও একজন। স্যারেরা আমাকে বিভিন্ন সময় বই খাতা দিয়ে সাহায্য করতেন। সহপাঠীদের ভালোবাসা সহানুভূতি ও ছিলো যথেষ্ট। পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে। একটি ভালো রেজার্টের প্রত্যাশায় আমি রাত দিন পড়াশুনায় ব্যস্ত।

http://bangla.earthtimes24.com

সোহেল আহমেদ

আমার রাত জাগা দিনভর পড়াশুনায় যে গুরেবালি আসন্ন তা কি কেউ বুঝেছে? হঠাৎ স্কুলে যাতায়াতে বখাটেদের উৎপাত। এই উৎপাত আগেও ছিলো। আমার বান্দুবিরা ওদের প্রশ্রয়ে পড়ে গিয়েছে। কেনইবা পড়বেনা। বান্দুবিদের বিভিন্ন গিফট নিয়ে বিক্রি হয়ে গেছে আমাকে পটানোর জন্য। ব্যর্থ ওদের মিশন। আমায় বুজিয়ে না পেরে এবার মায়ের কাছে ফোন। মা আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করলেন।আমি ও মা দুজনেই বন্ধুর মত। আমি মাকে বখাটেদের সম্পর্কে বলি।

কিন্তু বুজিনি মা ভয় পেয়ে যাবেন। মাও আমায় সাহস দিলেন পড়াশুনায় মন দিতে বললেন। তাই করলাম। হঠাত গ্রাম থেকে দুইজন এসেছেন। মা পরিচয় করিয়ে দিলেন তারা সম্পর্কে আমার কাকা হন। এই কাকা সেই কাকা নন। আমার কমল মতি শিক্ষা জীবনের ধ্বংশের মাধ্যম। মায়ের সরলতায় তারা সুযোগ গ্রহন করছে। জানতে পারলাম তাদের এক মাস্টার্স পড়ুয়া ছেলের জন্য আমাকে পাত্রী হিসেবে ঠিক করেছে। বাবা এই কর্মকান্ডে বাধা দিলেও মায়ের সাথে বুঝে উঠতে পারলো না। মেয়ে বড় হয়েছে। চারদিক ঝৈ ঝামেলা।তাছারা আগ্রহ থাকতে আগেবাগেই দিতে পারলে ভালো। মা সবাইকে এরকম বোঝাতে চায়।

কোন স্বজনদের সমর্থন না পেলেও মা তার অকাল দ্বায়িত্ব এরানোর জন্য আমাকে বানালেন খেলার পুতুল। জেএসসি পরীক্ষার মাত্র মাসখানেক বাকি। স্কুল, প্রাইভেট শিক্ষকসহ প্রতিবেশী সবাই মাকে বোঝাতে আসলেন। অন্তত আমার পরীক্ষা টা দেয়ার পর বিয়ের কথা ভাবতে। মা সবাইকে বখাটেদের উৎপাতের দোহাই দিলেন। শহরের বাড়ি,যদি কোন অঘটন ঘটে তবে কি হবে? মায়ের এ প্রশ্নের কাছে আমি এবং আমরা নিরব। তাছাড়া উচ্চ শিক্ষিত ছেলে। আবার চাকরিও করে। মাকে অবশ্য ভয়ের পাশাপাশি অনেকটা লোভেও পেয়ে বসেছে।

এটা যখন বুজতে পারলাম তখনই থেমে গেলাম। নিশ্চুপ আমি।মা আমায় শান্তনা দিলেন। ছেলে উচ্চ শিক্ষিত। বিয়ে হলেও আমাকে পড়াবে। হা না কিছুই বলার দরকার মনে করলাম না। রেওয়াজমত বিয়ে হলো। শশুর বাড়ির গন্তব্য। কিভাবে সংসারি হব,কিভাবে শশুর শাশুরির মন জয় করব,কিভাবেইবা স্বামীর বাড়ি নিজেকে মানিয়ে নেব তা কি মা আমায় শিখিয়েছেন??? যে মা হাত পুরে যাবার আশংকায় চুলার কাছে যেতে দিলেন না অথছ সে মাকি জানতেন না স্বামীর সংসারে গেলে এসব আমায় করতে হবে? বিয়ের কদিনের মধ্যেই নালিশ। আমার নানা অযোগ্যতা নিয়ে। মা তাদের বোজালেন। কাজ হলো না। প্রথমে ব্যবসার অযুহাত। তারপর টাকা লাগবে। আমার বাবা মাকে সহযোগীতা করতে বললেন। বাবা এবার অনাগ্রহ। তারা শশুর শাশুরি যে যার মত আমায় নেতিবাচক দৃস্টিতে দেখা শুরু করলেন।

যে শশুর আমাকে মেয়ের মত মনে করে বিয়ের আগে মাকে পটালেন,সে আজ কাজের বুয়ার চেয়েও খারাপ ব্যবহার করছেন। আর স্বামী? সেতো আমার নয়! শুনেছি এ বিয়তে তারও অমত ছিলো। আমি কিছু বলতে গেলেই বাবা মা জানে বলে চুপ থাকে। কি করব এখন? জন্মের পর যে অভিজ্ঞতা গত ১৩ বছরে হয়নি, তা মাত্র এক মাসের সংসার জীবনে হয়ে গেলো। বেরানোর ছুতোয় বাবা মার কাছে এলাম। ঘটনার বিবরন শুনে মা হু হু করে কাদছে আর বলছে এ জন্য তিনিই দ্বায়ি। বাবা কস্টের যন্ত্রনায় বলে দিলেন আর যেতে হবে না। ওরা বড় লোক। লোভি ওদের পরিবার।বাবা নিজে গিয়ে স্বইচ্ছায় আমার ডিভোর্সের ব্যবস্থা করলেন। বাবা মা দুজনেই তাদের দ্বায়িত্ব শেষ করলেন। কিন্তু আমি যে বন্চিত হলাম। মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে অকালেই ঝড়ে পড়লাম? ঝরে গেলো আমার ভবিষ্যৎ জীবনের স্বাধীনতাও।কেন এমন হলো??? ( এটি একটি বাস্তব ঘটনার বহি: প্রকাশ,ভিকটিমের অনিচ্ছায় নাম প্রকাশিত হয়নি,কাল্পনিক আকারে লেখা হয়েছে।)