৯২ বছর বয়সে ভেলকি দেখিয়ে আবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ। ১৫ বছর পর আবার দেশটির কান্ডারির ভূমিকায় এ রাজনীতিবিদ। তাঁর ২২ বছরের শাসনামলে দ্রুত উন্নয়ন ঘটে দেশটিতে। নির্বাচনী প্রচারে নেমে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই তা পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন তিনি। সহযোগিতার জন্য পাঁচজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন। মাহাথিরের দুই দশকের শাসনকালে বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন এঁরা। পুরোনো এই পাঁচ সঙ্গীকে নিয়েই মালয়েশিয়ার অর্থনীতি নতুন করে সাজাবেন মাহাথির।
‘বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাউন্সিল’ নামে পরিচিত এই পাঁচজন মাহাথিরের অর্থনৈতিক কর্মসূচির কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এরই মধ্য তাঁরা বিনিয়োগকারী এবং ক্রেডিট রেটিং ফার্মগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দেওয়া শুরু করেছেন। অর্থমন্ত্রী লিম গুয়ানের সঙ্গে এই কাউন্সিলের সদস্যরা মাহাথিরের পক্ষে কাজ করবেন।
মাহাথিরের উপদেষ্টা দলে আছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, ধনকুবের ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির সাবেক প্রধান নির্বাহী। তাঁরা অগ্রাধিকারের তালিকাও ঠিক করে ফেলেছেন। জ্বালানিতে ভর্তুকি পুনর্বহাল, বড় আকারের সরকারি প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা এবং ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিসহ কর পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।
মাহাথিরের পাঁচ অর্থনৈতিক উপদেষ্টার বিস্তারিত—
ডাইম জয়নুদ্দিন
৮০ বছর বয়সী ডাইম জয়নুদ্দিন মাহাথির মোহাম্মদের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এক সহযোগী। সংকট মুহূর্তে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মাহাথির যাঁদের ওপর ভরসা করতেন, জয়নুদ্দিন তাঁদের একজন। যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষিত একজন আইনজীবী তিনি। পেশা হিসেবে তিনি জীবনের অনেকটা সময় আবাসন খাত ও ব্যাংকে কাজ করেন। ১৯৮৪-১৯৯১ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এশিয়ায় আর্থিক সংকট-পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯-২০০১ পর্যন্ত দ্বিতীয়বার অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মাহাথিরের অন্যতম এই সহযোগীর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় সড়ক, স্কুল এবং অন্য প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নেন। ব্যাংকের সুদ কমিয়ে আনতেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ডাইম জয়নুদ্দিন মাহাথিরের এলাকার লোক। দুজনেরই বাড়ি খেদায় প্রদেশে।
জেতি আকতার আজিজ
মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম এবং একমাত্র নারী গভর্নর জেতি আকতার আজিজ। ২০১৬ সালে পদ থেকে সরে যাওয়ার আগে দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ৭০ বছর বয়সী জেতি আকতার আজিজ যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়া ঝানু ব্যাংকার। ব্যাংক নেগারা মালয়েশিয়ার বিশ্বস্ততা ও স্বাধীন করার ক্ষেত্রে বড় অবদান রয়েছে তার।
কয়েক দশক আগে এশিয়ার মন্দার পরে জেতি আকতার আজিজে গৃহীত নীতির কারণে মালয়েশিয়া অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে ওঠে। আইএমএফসহ বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দিয়ে অর্থনীতিকে মজবুত করার অন্যতম কারিগর ছিলেন জেতি আকতার আজিজ।
হাসান ম্যারিকান
হাসান ম্যারিকান ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সালে অবসর নেওয়া পর্যন্ত জাতীয় তেল কোম্পানি পেট্রলিয়া ন্যাশিওনাল বারহাদের প্রধান নির্বাহী ছিলেন। ৬৫ বছর বয়সী হাসান ম্যারিকানের নেতৃত্বেই একটি ছোট্ট তেল কোম্পানি থেকে বিশ্বের ৫০০ শীর্ষ কোম্পানির কাতারে উঠে আসে পেট্রোনাস। মালয়েশিয়ার এই তেল কোম্পানি এখন বিশ্ববাজারে অন্য বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। জ্বালানিশিল্পে তিন দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হাসান ম্যারিকানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার। সেমবকর্প মেরিন লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
জোমো কোয়ামে সুন্দরম
৬৫ বছর বয়সী জোমো কোয়ামে সুন্দরম একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক সহকারী মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া জোমো কোয়ামে মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে অনেক বই লিখেছেন। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে ‘এম ওয়ে: মাহাথির’স ইকোনমিক পলিসি লিগেসি’ বেশ জনপ্রিয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের অর্থনৈতিক নীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন জোমো কোয়ামে সুন্দরম। নাজিব রাজাকের রেল প্রকল্পের কট্টর সমালোচক জোমো কোয়ামে সুন্দরম। তিনি বলতেন, এ প্রকল্প কোনো অর্থনৈতিক মূল্য বহন করবে না। মালয়েশিয়ার চীনের বিনিয়োগের সমালোচক জোমো কোয়ামে সুন্দরম।
রবার্ট কুক
৯৪ বছর বয়সী রবার্ট কুক একজন ঝানু ব্যবসায়ী। যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতার পরপরই চিনির ব্যবসা করে প্রচুর সম্পদের মালিক হন তিনি। মালয়েশিয়ায় তাঁকে ‘সুগার কিং’ বলে ডাকা হয়। মালয়েশিয়ার পাশাপাশি পরবর্তী সময় সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ব্যবসা বিস্তার করেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাম তেল কোম্পানি থেকে শুরু হয়ে বেইজিংয়ের সবচেয়ে উঁচু ভবনেও তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি চীনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করছেন।