মাহাথির নাকি নাজিব রাজাক, কে যাচ্ছেন ক্ষমতার মসনদে?

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় বুধবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশটির এবারের নির্বাচনে বেশ জোড়ালো প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো তুমুল প্রচারণা চালিয়েছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে, সমাবেশ করে ভোট প্রার্থনা করেছেন।

তবে এই নির্বাচনী হাওয়ার পালে শক্তিশালী কম্পন জুড়ে দিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৯২ বছর বয়সী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। চলতি বছরে তিনি যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন তখন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাস পাওয়া যায়।

বুধবারের ভোটাভুটির পর জানা যাবে কে যাচ্ছেন ক্ষমতার মসনদে। আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে পরিচিত মাহাথির মোহাম্মদ নাকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন মাহাথির।

তারই নিজের হাতে গড়া দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন জোটে অংশ নিয়েছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে যা মাহাথির মোহাম্মদের ছুঁড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে ২০০৩ সালে এ দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ।

সেখান থেকে পদত্যাগের পর মাহাথির মোহাম্মদ নিজেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। সে দল সরকারবিরোধী জোটে যোগ দেয়। নির্বাচনের প্রচারণার সময় মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, আমি ইতোমধ্যে বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমার খুব বেশি সময় বাকি নেই। আমি দেশকে পুনরায় গঠনের জন্য কিছু কাজ করতে চাই। হতে পারে, অতীতে আমি যে ভুল করেছি সেগুলোর সংশোধন করতে চাই।

মালয়েশিয়ার সরকারবিরোধী জোট প্রধানমন্ত্রী পদে লড়াইয়ের জন্য মাহাথির মোহাম্মদকে নির্ধারণ করেছে। সরকার বিরোধী এ জোটের নেতা ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় থাকার সময় আনোয়ার ইব্রাহিম ছিলেন তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি। আনোয়ার ইব্রাহিমকে রাজনৈতিকভাবে হুমকি বলেও মনে করতেন তিনি। একসময় রাজনৈতিক মতপার্থক্যও তীব্র হয়ে উঠেছিল উভয়ের মধ্যে।

১৯৯৯ সালে আনোয়ার ইব্রাহিমকে সমকামিতার অভিযোগে কারাগারে পাঠান মাহাথির মোহাম্মদ। ২০০৩ সালে মাহাথির মোহাম্মদের বিদায়ের পর ২০০৪ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান ইব্রাহিম। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন নাজিব রাজাকের দলের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

সে নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের দল অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল এবং নাজিব রাজ্জাকের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। এরপর ২০১৫ সালে সেই সমকামিতার অভিযোগে আনোয়ার ইব্রাহিমকে আবারো জেলে পাঠানো হয়।

যে আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ, সেই আনোয়ার ইব্রাহিমকে এখন ক্ষমতায় বসানোর জন্য উদগ্রীব হয়েছেন তিনি।

এখন আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরোধী জোট থেকেই নির্বাচন করছেন মাহাথির মোহাম্মদ। নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে কিছুদিন পর আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। এমনটাই পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধী জোটের।

মাহাথির মোহাম্মদ মনে করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ক্ষমতা থেকে সরানোই হচ্ছে আসল উদ্দেশ্য। আনোয়ার ইব্রাহিম যথেষ্ট শাস্তি পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে সম্পদ পাচার, রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এক নির্বাচনী প্রচারণায় মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই। নাজিবকে আমিই তুলে এনেছিলাম। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। এখন আমি সে ভুল শোধরাতে চাই।

সম্প্রতি নির্বাচনী আসনের সীমানা পরিবর্তনের কারণে ভোটের হিসেব-নিকেশে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক জোট বারিসান ন্যাশনাল কোয়ালিশন কিছু সুবিধা পাবে। বিরোধী সমর্থকরা মনে করেন, নির্বাচনে এতো কারচুপি হয় যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কঠিন হয়ে উঠে। বিরোধী রাজনৈতিক জোটের ছয়জন প্রার্থীকে এরই মধ্যে অযোগ্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারবেন না। সম্প্রতি একটি আবাসন প্রকল্পের জন্য সরকারের এক মিলিয়ন রিঙ্গিত বরাদ্দের ঘোষণা করেছেন নাজিব রাজাক। এর ফলে সেখানে তার ভোট বাড়বে।

তবে অর্থনৈতিক অবস্থা সরকারের জন একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার বিক্রয়ের উপর কর বসানো হয়েছে এবং জ্বালানী তেলের উপর ভর্তুকি কমানো হয়েছে। ফলে মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক দেশটির মালয় জনগোষ্ঠীকে আশ্বস্ত করতে পারে যে তার দল মালয় সম্প্রদায়ের জন্য এবং তাদের ধর্ম ইসলামের জন্য অনেক কিছু করতে পারে। সরকার পক্ষ জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে বিরোধী জোটকে ভোট দিলে সেটি ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন পার্টিকে লাভবান করবে, যারা মূলত জাতিগত ভাবে চীনা রাজনৈতিক দল।

নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হলে মাহাথির মোহাম্মদ তার ৯৩তম জন্মদিনের দিকে এগুবেন। কিন্তু এরপর সেই আনোয়ার ইব্রাহিমকে ক্ষমা করে জেল থেকে বের করে তার হাতেই ক্ষমতা তুলে দিবেন মাহাথির মোহাম্মদ।