মাসে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির হয়ে কারাভোগ করতে রাজি হয়েছিল নকল সোহাগ। আত্মসমর্পণের দুই-তিন মাসের মধ্যে নকল সোহাগকে কারাগার থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আসল সোহাগ। শনিবার (২৯ জানুয়ারি) আসল সোহাগকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, শনিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর রাজধানীর কদমতলি থানাধীন নোয়াখালী পট্টিতে হুমায়ুন কবির টিটুকে গুলি করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বড় সোহাগ, মামুন, ছোট সোহাগসহ আরও ৩-৪ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ওই মামলার ১ নম্বর আসামি বড় সোহাগকে গ্রেপ্তার হয়। ২০১৪ সালের ১৬ মে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পলাতক ছিল বড় সোহাগ। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর বড় সোহাগের অনুপস্থিতিতে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক আরও জানান, রায় প্রকাশের পর বড় সোহাগের পরিকল্পনা মোতাবেক তার ফুফাতো ভাই মো. হোসেন বড় সোহাগ পরিচয়ে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ জামিন চাইলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠান। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, মাসিক ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল হাজতে যায় নকল সোহাগ। নকল সোহাগকে ২-৩ মাসের মধ্যে কারাগার থেকে বের করে আনার আশ্বাস দেয় আসল সোহাগ। তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এক সাংবাদিক টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজনের জেলা খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চান। প্রতিবেদনে ২০১০ সালে গ্রেপ্তার করা আসামি সোহাগ এবং বর্তমানে হাজতে থাকা নকল সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের রিপোর্টেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।
২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে র্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা টিম আসল সোহাগকে ধরার চেষ্টা করছিল। এরইমধ্যে বিশেষ দায়রা আদালত ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ প্রকৃত আসামির (সোহাগ) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ তথ্য জানতে পেরে আসল সোহাগ দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করে। জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তনের পর পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহ করে সে। দেশত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় শনিবার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল আসে বড়। এ সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বড় সোহাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা আছে।