মাশরাফির অন্যরকম ইচ্ছেপূরণ!

:
: ৬ years ago

বয়স প্রায় ৩৫। ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব বেশি নয়। তবে বোলারদের বিশেষ করে পেসারদের জন্য বয়সটা কম নয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশি পেস বোলারদের জন্য ৩৪ প্লাস বয়সে ফিটনেস ধরে রেখে নিয়মিত খেলা কঠিন। মধ্য তিরিশে দাঁড়িয়ে প্রায় দুই মাসের মত সময়ে টানা ১৫ (প্রথম লিগে ১১, সুপার লিগের আজকের ম্যাচসহ ৪টি) খেলা আরও কঠিন।

কিন্তু এবার প্রিমিয়ার লিগে সেই কঠিন কাজটিই করে দেখালেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। আজ (সোমবার) শেরে বাংলায় খেলাঘর সমাজ কল্যাণের বিপক্ষে ৩২ রানে ৩ উইকেট শিকারি মাশরাফির এবার ঢাকার প্রিমিয়ার লিগে উইকেট দাঁড়িয়েছে মোট ৩৮টি।

আগামী ৫ এপ্রিল লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের সাথে শেষ ম্যাচে কোন উইকেট না পেলেও এবারের ঢাকা লিগে মাশরাফির সর্বাধিক উইকেট শিকারি হওয়া শতভাগ নিশ্চিত। কারণ, ১৫ ম্যাচ শেষে মাশরাফির উইকেট সংখ্যা ৩৮। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বি মোহামেডানের বাঁ-হাতি পেসার কাজী অনিক, লিজেন্ডস অফ রুপগঞ্জের বাঁ-হাতি স্পিনার আসিফ হাসান ও প্রাইম দোলেশ্বরের পেস বোলার ফরহাদ রেজা প্রত্যেকের পকেটে জমা পড়েছে সমান ২৮টি করে উইকেট।

শুধু এবারের লিগে সর্বাধিক উইকেট শিকারীই নয়। ২০১৩ থেকে ‘লিস্ট এ’র মর্যাদা পাওয়া প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরে সর্বাধিক উইকেট শিকারি হওয়াই শেষ নয়, এবারের লিগে শিরোপার গন্ধ যে দলের নাকে- সেই আবাহনীর সাফল্যের অন্যতম রুপকার মাশরাফি।

দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে আগে কখনো যে কৃতিত্ব ছিল অধরা- সেই হ্যাটট্রিকের দূর্লভ কৃতিত্বও দেখিয়েছেন এবার। ৬ মার্চ ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে হ্যাটট্টিক সহ শেষ চার বলে ৪ জনকে আউট করে ৪৪ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন মাশরাফি।

মধ্য তিরিশে ফিটনেস ধরে রেখে এবং সব ম্যাচ খেলে লিস্ট ‘এ’-তে এই যে দুর্দান্ত রেকর্ড, এর পিছনের রহস্য কি? কোত্থেকে পেলেন এত অনুপ্রেরণা?

আজ খেলা শেষে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে মাশরাফি জবাবে যা বলেছেন, তার সারমর্ম হলো তিনি নিজের ফিটনেস ধরে রাখা এবং ৫০ ওভারের ফরম্যাটে পারফরমেন্সের গ্রাফ ঠিক রাখার লক্ষ্যেই এবারের লিগে শতভাগ মন দিয়ে খেলেছেন। তাতে সাফল্যও ধরা দিয়েছে।

সোমবার পড়ন্ত বিকেলে শেরে বাংলার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে মাশরাফি বলেন, ‘যেহেতু টি-টোয়েন্টি খেলছি না। নিদাহাস ট্রফিতে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই লিগের শুরুতে জানতাম, এ মৌসুমে পুরো লিগ খেলার সুযোগ আছে। তবে লিগ শুরুর আগে এমন চিন্তা করিনি যে এত উইকেট পাবো। মাইন্ড সেটটা ওইরকম ছিল না। তবে লক্ষ্য ছিল যেন ওয়ানডে সিরিজ আসার আগে সব ঠিকঠাক থাকে। সে আলোকে এই লিগ তাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত এখনো পর্যন্ত সব ভালো যাচ্ছে- আমার কাছে এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।’

তার ব্যক্তিগত টার্গেট কি ছিল? জানতে চাওয়া হলে মাশরাফির বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য ছিল, আমি যেন ভালো শেপে থাকি, প্রস্তুতি যেন ভালো থাকে। উইকেটের ব্যাপার না আসলে। যেটা আমার ফোকাস ছিল আমি এখন পর্যন্ত সেটা পেরেছি, এটাই বড় ব্যাপার।’

প্রশ্ন উঠলো দীর্ঘদিন খেলার অভিজ্ঞতা কাজে দিয়েছে কতটা? মাশরাফির জবাব, ‘না, যদি আমার খেলার কথা বলেন, অনফিল্ডে আমার পারফরম্যান্সের কথা বলেন সে জায়গায় পার্থক্য তৈরি হয়নি। একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে ম্যানেজিং পাওয়ারটা। ম্যানেজিং পাওয়ারটা মাঠের বাইরেও হতে পারে। জিম, রানিং হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে হবে। এটা অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে হবে। আপনি যখন দীর্ঘদিন খেলবেন, আপনাকে অনফিল্ডে সেটা সহায়তা করবে।’

মাশরাফি একা নন, এবার স্থানীয় পেসাররা তুলনামুলক ভাল বোলিং করেছেন। তাদের মধ্যে কে কে নজর কেড়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ‘এ বছর বেশ কজন ভালো খেলেছে। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকা আপনারা দেখেছেন, বলেছেন। ওখান থেকে জানা যায়। শীর্ষ তালিকার পাঁচ-ছয়জনের মধ্যে চারজন ফাস্ট বোলার আছে। এটা ভালো সাইন আমাদের জন্য। এদের মেইনটেইন করতে হবে, এদের তৈরি করে রাখতে হবে। ফরহাদ রেজা বাদে বেশিরভাগ বোলার কিন্তু তরুণ। উইকেট অনেক ফ্লাট ছিল, ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব সহায়ক ছিল। এ ধরনের উইকেট পেস বোলারদের অনুশীলনের জন্য ভালো। যদি বাইরের টুর্নামেন্টে বা যদি বিশ্বকাপের দিকে তাকান, ফ্লাট উইকেট বোলিং করতে হবে। সে জায়গা থেকে বলব পেস বোলারদের এই পারফরম্যান্স ইতিবাচক। এটা ধরে রাখতে হবে।’

এই মুহূর্তে মোস্তাফিজ-তাসকিন তো আছেনই। কাজী অনিক ভালো বোলিং করেছে। আরও কিছু অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ফাস্ট বোলার আছেন। প্রাইম দোলেশ্বরের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে দেখলাম শাকিল নামের একটা বোলার ছিল, প্রথম বিভাগ থেকে এসেছে। এরা ইন-আউট ভালো করেছে। এদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে ভালো প্রস্তুতির মধ্যে রাখতে পারলে নিকট ভবিষ্যতে ভালো করবে।’

এবারের লিগে নিয়মিত উইকেট পাওয়া মাশরাফির তৃপ্তির জায়গা দুটি। এক, যা যা করতে চেয়েছেন, তা হয়েছে। মানে পেরেছেন। আর অনেক কিছুই নতুন করে করেছেন। তার অনুভব সেগুলো ভালমত হয়েছে। যা তার আত্ববিশ্বাস বাড়াতে কার্যকর ভুমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস মাশরাফির।

তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আমার জন্য ভালো সুযোগ ছিল নিজেকে এক্সপ্রেস করার। আমি যেটা চেয়েছিলাম সেটা করতে পেরেছি। অনেক কিছুই আমি নতুন করে করতে পেরেছি লিগে, যেটা আমার হচ্ছে। যেটা হয়তো প্রত্যাশা করিনি। শুরুতে ফার্স্ট ক্লাসের জন্য বিশ্রাম নিব কি না; কিন্তু আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেই ঝুঁকিটা নেওয়া কাজে এসেছে। আন্তর্জাতিক কোয়ালিটির মতো না হলেও আমার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজে এসেছে। যেটা হয়তো অফ সিজনে অনুশীলনে কোচদের সাথে আলোচনা করে জিনিসটা বিল্ড আপ করা যায় কি না, যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও কাজে লাগাতে পারি।’

যেখানেই যান, সেখানেই চ্যাম্পিয়ন- এর পিছনের কারণ কি? মাশরাফির এক কথায় উত্তর, ‘পরিশ্রম।’ পাশাপাশি ভাগ্যও নাকি একটা ফ্যাক্টর। ‘পরিশ্রম তো করতেই হবে। আমি লাকে অনেক বিশ্বাসী, এটাও গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম, ট্রাই নেশন চ্যাম্পিয়ন হলে। তাপরও একটার পর একটা সিরিজ আসবে। চেষ্টা ও চালিয়ে যেতে হবে, কষ্টও করতে হবে। যতদিন খেলব। তারপর কিছু পেলে তো ভালোই লাগে। সেটা হলে ভালো লাগে, না হলেও পরের দিনে আবার উঠে একই কাজ করতে হয়। ওটা ধরে চলা খুব কঠিন।’

শেষ খবর আগামী ১০ এপ্রিল থেকে বিসিএলের শেষ তিন পর্ব। মাশরাফি কি তাতে অংশ নেবেন? কথা শুনে মনে হলো, এক রাউন্ড হলেও খেলবেন। বিসিএল প্রসঙ্গে তার কথা, ‘আমি নিশ্চিত নই এখনো। একটা ম্যাচ বিশ্রাম নিতে পারি। এরপর দেখব।’

তবে ভিতরের খবর, একপর্ব খেলবেন নড়াইল এক্সপ্রেস।