সব কিছু চলছিল ঠিকমতই। ঠিকমত চলছিল বলা হয়ত কম বলা হলো। বরং বলা যায় প্রত্যাশার চেয়েও ভাল চলছিল। দুই পর্বের রাউন্ড রবিন লিগের আগে শেষ ম্যাচে এসে হঠাৎ ছন্দপতন।
জিম্বাবুয়েকে আগেও টানা আট ম্যাচ হারানোর রেকর্ড আছে। এবারও দুইবার পরপর হারিয়েছে মাশরাফির দল; কিন্তু সে জয় আগের যে কোনোবারের তুলনায় দ্যুতিমাখা। নজরকাড়া পারফরমেন্সে আলো ছড়ানো। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম লেগের জয়টি তো রীতিমত অবিস্মরণীয়। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় (১৬৩ রানের) ব্যবধানে জয়।
ডাবল লেগের দুই ম্যাচ আগেই ফাইনাল নিশ্চিত। তিন জয়ের সবগুলোয় প্রতিপক্ষকে রীতিমত বিধ্বস্ত করে বোনাস পয়েন্টসহ জেতা। সেই দল রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে ৮২ রানে অলআউট হয়ে হারলো ১০ উইকেটে।
উল্কার বেগে এগিয়ে চলা জয়রথ অনেকটা পথ যাবার পর থামতেই পারে। তাই বলে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে? এমন ব্যাটিং বিপর্যয় দুটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ভক্ত ও সমর্থকদের মনের গহীনে চিন্তার মেঘ- ‘আচ্ছা ফাইনালেও এমন ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটবে না তো?’ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফিরতি পর্বে এবং শ্রীলঙ্কার সাথে রবিন লিগের শেষ ম্যাচে মিডল অর্ডার যেভাবে বালির বাঁধের মত হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়লো, শুরুর ধাক্কা সামলাতে চরম ব্যর্থ হলো। ২৭ জানুয়ারী লঙ্কানদের সাথে ফাইনালেও কি সেই কাঁচভঙ্গুর মিডল অর্ডারের দেখাই মিলবে?’
মোট কথা, যত আলোচনা-পর্যালোচনা সব মিডল অর্ডার ব্যাটিং নিয়েই। কথাটা এত জোরে-সোরে উঠতো না যদি মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসির পরপর দুই ম্যাচে চরম ব্যর্থতার পরিচয় না দিতেন। তামিম-সাকিব পর পর তিন ম্যাচে দারুণ মজবুত ভিত রচনা দিয়েছেন। কিন্তু মিডল অর্ডাররা সেই শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েও স্কোরবোর্ডকে মোটাতাজা করতে পারেননি। সেই না পারাই চিন্তার কারণ।
যেখানে তামিম চার ম্যাচে (৮৪+৮৪+৭৬+৫ = ২৪৯ রান) ও সাকিবের (৩৭+৬৭+৫১+৮ = ১৬৩) ব্যাটে রানের নহর বইছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি ছাড়া আগের তিন ম্যাচে তাদের দুজনার ব্যাট থেকেই দলের ৬০ ভাগ রান এসেছে।
তামিম ও সাকিবের মত না হলেও মুশফিকও (চার ম্যাচে ১২০) মোটামুটি রানে আছেন; কিন্তু মিডল অর্ডার ব্যাটিংটা যাদের কাঁধে, সেই মাহমুদউল্লাহ (২৪+২+৭ = ৩৩), সাব্বির (২৪+৬+১০ = ৪০) ও নাসির (০+২+৩ = ৩) নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন।
একটা দলের টপ অর্ডারের সাথে মিডল অর্ডারের রান করার আনুপাতিক তারতম্য কত বেশি হতে পারে? কোথায় এক ওপেনার চার ম্যাচে আড়াইশো। ওয়ানডাউনে দেড়শোর বেশি আর চার নম্বর ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ সোয়াশো প্রায়, অথচ সেই দলের তিন মিডল অর্ডারের সংগ্রহ মোটে ৭৬! ভাবা যায়!
রান করার আনুপাতিক তারতম্য এত বড় হলে কী চলে? তাতে ব্যাটিংয়ের স্থীতি কমে যায়। ফাইনালের আগে তাই মিডল অর্ডারকে নিয়েই যত চিন্তা। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় সাকিবের তিন নম্বরে খেলাটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
বার বার মনে হচ্ছে সাকিব পুরনো পজিশন মানে পাঁচ নম্বরে খেললে হয়ত মিডল অর্ডারের এ করুণ দশা হতো না। ফাইনালের আগে অফিসিয়াল প্রেস মিটে এসব নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
২৩ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে উঠে এসেছে অনেক প্রসঙ্গই। সাহসী নাবিক মাশরাফির অভিধানে চিন্তা, টেনসন আর ভয়-ডর বলতে কিছু নেই। ৮২ রানে অলআউট হওয়ার পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় তার কন্ঠে; কিন্তু অনেক কথার ভীড়ে মনে হলো তার মনের কোনে কোথায় যেন মিডল অর্ডার নিয়েই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
মিডল অর্ডার নিয়ে জোর গলায় কিছু বলতে পারলেন না টাইগার অধিনায়কও। কাল ফাইনালে শুরুতে বিপর্যয় ঘটলে হলে বা বাজে পরিস্থিতি আসলে মিডল অর্ডার কি সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে?
এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি নেতিবাচক কথা বলেননি। আবার খুব যে সাহস নিয়ে ‘হ্যাঁ পারবে’ বলেছেন, তাও নয়। মিডল অর্ডার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মাশরাফির ব্যাখ্যা, ‘এটা সত্যি, সাকিব আর তামিমই খেলে যাচ্ছে। তামিম শুরুতে আউট হয়ে গেলে একটা চাপ হয়ে যায়। তামিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে যেন টোটাল খেলা কন্ট্রোল করে। সাকিবও অবশ্যই আমাদের বেস্ট পারফর্মার। এতোদিন সে পাঁচে খেলেছে, এখন তিনেও বেশ ভালো ব্যাট করছে। এখন আপনি মুশফিকের দিকে তাকান, সেও খারাপ অবস্থায় নেই। কালও অনেকক্ষণ সে ব্যাট করেছে। পাশে একজনকে পেলে ওর জন্য হয়তো সুবিধা হতো। মিডল অর্ডার ভেঙ্গে পড়েছে। তবে ফাইনালেও তারা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লে মাথা তুলে দ্াড়াতে পারবে না, এমন ভাবতে চাই না আমি।’