প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে স্বল্প আয়ের দেশকে যে পর্যায়ে রেখে যান, সেখান থেকে এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে গ্রাজুয়েশন লাভ করতে যাচ্ছে। আগামী মার্চ মাসেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পাবে ইনশাল্লাহ। এখন আর কেউ আগের মতো আমাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে পারবে না। কারণ আমরা সেই জায়গাটায় পদার্পণের সক্ষমতা অর্জন করেছি। গতকাল রবিবার সকালে তেজগাঁওস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রদত্ত ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৫ ও ২০১৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসেই আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ-১ মহাকাশে উেক্ষপণ করা হবে। আমরা স্যাটেলাইট যুগেও চলে যাচ্ছি। অর্থাত্ আমাদের আকাশ থেকে একেবারে সাগরের তলদেশ (নেভীর জন্য সাবমেরিন) পর্যন্ত সব জায়গাতেই বাংলাদেশ বিচরণ করবে-সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলে যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে ২৬৫ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ অর্জনের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৫ সালের জন্য ১২৪ জন এবং ২০১৬ সালের জন্য ১৪১ শিক্ষার্থী এই পদক লাভ করেন। বিশ্বায়নের যুগে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে গুণগত ও মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে মানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী উচ্চশিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ২৬৫ জনকে আমরা স্বর্ণপদক দিলাম। আমি সত্যই খুব আনন্দিত। আর ২০১৬ সালের বেলায় আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েদের সংখ্যাটা বেশ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলতেন একটি সমাজে নারী-পুরুষ সকলেরই সমান অধিকার থাকা উচিত, সবাইকেই সমান সুযোগ করে দিতে হবে। কাজেই আমরা সেটারই চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ছেলেদের পড়াশোনায় আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু লেখাপড়া নয়, খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি চর্চা সবদিকেই প্রচেষ্টা থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পরিবর্তন হলে এ দেশে অনেক ক্ষেত্রেই নীতির পরিবর্তন হয়, যা দুঃখজনক। শিক্ষা ক্ষেত্রেও তেমন ঘটনা ঘটেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট সুবিধা গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। তিনি বলেন, আমরা পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র করছি, সেনা-নৌ-বিমানবাহিনী থেকে শুরু করে প্রতিটি বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক করে গড়ে তুলছি, মেডিক্যাল থেকে শুরু করে বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি সেখানেও তো আমাদের ভবিষ্যতে শিক্ষক লাগবে, প্রযুক্তিবিদ লাগবে, ডিজিটাল বাংলাদেশের অনেক দক্ষ জনবল দরকার। সেজন্যই শিক্ষাটা আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। এই যে বিপুল কর্মযজ্ঞ আমরা শুরু করেছি সেটা এগিয়ে নিয়ে যাবে আজকের প্রজন্ম। তিনি বলেন, আজকের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই আগামীর কর্ণধার গড়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষার বিকাশে তিনি ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর পদাংক অনুসরণ করেই এটাকে আমরা আরো শক্তিশালী করতে চাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে শিক্ষার উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। ফলে মাত্র দু’বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়। তিনি বলেন, এ অর্জনের স্বীকৃতি হিসাবে বাংলাদেশ ‘ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করে এবং পুরস্কারের টাকায় তাঁর সরকার শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই সাক্ষরতার হার না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে ৪৪ শতাংশে নামিয়ে আনে, যা অত্যন্ত দর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে তিনটি নতুন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। যে সব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সে সব জেলায় একটি করে সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতা, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের এবং ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তত্কালীন বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।