মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশে সভা-সমাবেশ সীমিত করেছে সরকার

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের সাংবিধানিক অধিকার থাকলেও ক্ষমতাসীন সরকার তা সীমিত করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০১৭ সালে বিশ্বের ২০০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশাল ওই প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে এ কথা বলা হয়েছে।  এতে মোটা দাগে বাংলাদেশের গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ ও রাজনৈতিক অধিকারের স্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতার দাবি করা হলেও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির জন্য মিয়ানমারকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। তবে নিজ দেশের মিডিয়াকে ‘জনগণের শত্রু ও ভুয়া’ দাবি করা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অন্য দেশের গণমাধ্যম নিয়ে দাদাগিরি করার যৌক্তিকতা কতটুকু- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।    যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন জে জুলিভান স্থানীয় সময় শুক্রবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিস’ শিরোনামে ঢাউস আকারের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) হিসেবে অভিহিত করেছে। বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী নামে একটি এনজিওকে ঘরোয়া বৈঠকের অনুমতিও দেওয়া হয়নি। এক সময়ের রাজনৈতিক দলটি এনজিও হিসেবে সভা করার অনুমতি চেয়েও পায়নি। গত ৯ অক্টোবর জামায়াতের আমির, ডেপুটি আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ ৯ জনকে ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে আটক করা হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, দেশ অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল তারা।  গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়া খুবই সরব এবং নিজ নিজ মতামত নিঃসংকোচে প্রকাশ করছে। তবে সরকারের সমালোচনা করলে তাদের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। সংবিধানে বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলা থাকলেও সরকার কখনও কখনও সে অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হচ্ছে। কথা বলার অধিকারের ওপর সরকারের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ আছে। সরকারের দমন-পীড়নের ভয়ে কোনো কোনো সাংবাদিক নিজেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছেন।

বাংলাদেশের সুশীল সমাজের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিভি, রেডিও, সংবাদপত্রের প্রচার ও প্রকাশনার লাইসেন্স প্রদানে রাজনৈতিক তদবির প্রভাব ফেলে। ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরাই সাধারণত লাইসেন্স পেয়ে থাকেন।

বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিচার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে এগোচ্ছে না। বিচারকদের অপসারণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিং করেন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক উপ-সহকারীমন্ত্রী মাইকেল কোজ্যাক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন শীর্ষ গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের আক্রমণ করে চলেছেন, তখন বিদেশি মিডিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদন প্রকাশ কতটা শালীন- এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি কোজ্যাক। বলেছেন, এটি করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী। এ প্রতিবেদনে ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না।