আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা হাসপাতাল আরও উন্নত হবে।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) দেশের ৬৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি আই সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি যুক্ত হন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রথম ৪ হাজার যখন চালু করি, তখন সেগুলোর ৭০ ভাগের মতো সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি সরকার ক্ষমতা এসেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। কারণ, এখানে যারা কাজ করবে, যারা সেবা নেবে, তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবে, সুতরাং এগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।’
‘আমরা বিএনপির মতো এসব দৈন্য চিন্তা করি না। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি, সেগুলোতে দলমত নির্বিশেষে সবধরনের মানুষ সেবা নিচ্ছে। বিএনপির চিন্তার দৈন্যতা আছে। তারা সবসময় স্বার্থপরতায় ভোগে।’
এ সময় করোনা মহামারির মধ্যে মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ধনি দেশও বিনামূল্যে করোনার টিকা দেয়নি। কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমরা বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি। তখন আমাদের রিজার্ভও ভালো ছিল। করোনাকালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য আমাদেরকে প্রতিটি নার্স-চিকিৎসককে আলাদা করে ভাতা দিতে হয়েছে। কারণ সেই সময়ে ভয়ে কেউ এগিয়ে আসতে চায়নি। এমনকি তাদের সুরক্ষায় পিপিইসহ বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী কিনে দিতে হয়েছে।’
করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানুষকে রক্ষা করতে পেরেছি। এর জন্য অনেক টাকা আমাদের খরচ করতে হয়েছে। অনেক কাজ আমরা হাতে নিয়েও শুরু করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘আগামীতে সুযোগ পেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ যেমন আমরা উন্নত করব, প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা হাসপাতাল আরও উন্নত করা হবে। সেখানে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনোরকম অবহেলা না হয় সে ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাচ্ছি। মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করে দিচ্ছি, ডাক্তার নার্স তৈরি হচ্ছে, ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ হাজারের মতো নার্স নিয়োগ দিয়েছি, ২২ হাজারের মতো ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। সরকার উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলো আরও উন্নত করবে এবং ডাক্তার-নার্সদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াবে।’
একই সময় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৮০টি উন্নয়ন প্রকল্প ও পুনঃখননকৃত ৪৩০টি ছোট নদী, খাল, জলাশয়সহ নতুন অনুমোদিত ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করা হয়।
পানিসম্পদ সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমরা দিয়েছি কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ, অনেক ভর্তুকি আমাদের দিতে হয়। যে টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি, প্রায় অর্ধেকের কম দাম ধরি। কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলা কঠিন। ঠিক পানি ব্যবহারের বেলায়ও। পানির অভাব নেই আমাদের। পৃথিবীর বহু দেশে পানির জন্য হাহাকার।’
তিনি বলেন, ‘নদী, খাল, বিল দূষণমুক্ত রাখতে হবে। যে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করবেন এতে যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থাটা থাকে। এই সম্পদটা হেলায় হারাবেন না। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। খাল, বিল, নদী, নালা, হাওর সবই আমাদের রক্ষা করতে হবে।’
শুধু বাঁধ দেওয়া আর স্লুইসগেট করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, প্রকৃতিকে তার আপন খেয়ালে চলতে হবে। কিন্তু তার মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পদ রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতিমধ্যে ৯৮ ভাগ মানুষকে আমরা সুপেয় পানি দিতে সক্ষম হয়েছি। এটাও এসডিজির একটা লক্ষ্য আমরা পূরণ করেছি।’
গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক প্রমুখ।