মানসম্মত শিক্ষাই চ্যালেঞ্জ

:
: ৭ years ago

ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস শুরু হতেই পেরিয়ে যেত ছয় মাস। আর চার বছরের সম্মান কোর্স সম্পন্ন করতে লেগে যেত ছয় থেকে সাত বছর।

দুই থেকে তিন বছরের সেশনজট পোহানোর পর ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হতো আরও ছয় থেকে নয় মাস। সব মিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটি আতঙ্কের নাম! সেশনজট রোধ আর শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পর এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাস। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে হবে পুরো জটমুক্ত। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পর এখন মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ। ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ এই সময়ে ব্যাপকতা বেড়েছে এ শিক্ষাঙ্গনের। সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি কলেজ মিলে ২০ লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। দেশের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী এর অন্তর্ভুক্ত। প্রতি বছর স্নাতক (পাস) ও স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ৭ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় হলেও তিন বছর আগেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পার করতে হয়েছে দুর্বিষহ সেশনজট। চার বছরের কোর্স শেষ করতে ছয় বছরের বেশি ক্ষেপণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ত দরিদ্র অভিভাবক ও সমাজের ওপর। শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়টিও থাকত উপেক্ষিত। সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখন সেশনজটমুক্ত। দেশের কলেজগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে এক বছরের মধ্যেই। ফলাফলও প্রকাশ করা হচ্ছে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে। চার বছরের অনার্স কোর্স শেষ হচ্ছে চার বছরের মধ্যেই।

শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সারা দেশে নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ। কলেজের অবকাঠামো, শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষকের মান, পরীক্ষার ফল, সহপাঠ কার্যক্রমসহ ৩১টি সূচকের মাধ্যমে সারা দেশে কয়েক বছর ধরে করা হচ্ছে সেরা কলেজের তালিকা। এতে সারা দেশের কলেজগুলো শিক্ষার মানোন্নয়নে উদ্যোগী হয়ে উঠছে। প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে। এতে দুর্ভোগ কমেছে সারা দেশের ছাত্রছাত্রীদের। প্রতিষ্ঠার পর কোনো সমাবর্তন না হওয়ায় আক্ষেপের সীমা ছিল না শিক্ষার্থীদের।

গত ১৭ জানুয়ারি প্রথম সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ গতকাল বলেন, ‘দেশের মধ্যেই নয়, সারা বিশ্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ৭০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী এর আওতাভুক্ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে উপেক্ষা করে শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হবে সেশনজটমুক্ত। এখন মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হলেই দেশের উন্নয়নে বৃহৎ ভূমিকা রাখবে এই তরুণ জনগোষ্ঠী। ’ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ২১ অক্টোবর থেকে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি।