মাদকসেবী বলে লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা, ঢাকায় ৩ পুলিশ সদস্য গ্রেফতার

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

তিনজনই সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্য। সাধারণ মানুষকে পুলিশ পরিচয়ে গাড়িতে তুলে জিম্মি করে অর্থ আদায় ও ডাকাতির অভিযোগে একবছর আগে তারা সাময়িক বরখাস্ত হন। এসব অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার শাহজাহানপুর ও যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাও রয়েছে। এবার তারা বাসায় ঢুকে গৃহকর্তাকে মাদকসেবী বলে এক লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করেন। এ সময় তাদের গ্রেফতার করেছে ডিএমপির মুগদা থানা পুলিশ।

গ্রেফতার এই তিন পুলিশ সদস্য হলেন- হাসান আল বান্না, নাসিদুল ইসলাম ও বেলাল হোসেন।

তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রিজার্ভ ও কল্যাণ ফোর্সে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।

মুগদা থানা পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে মুগদার উত্তর মানিকনগরের একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন রোববার সকালে তিনজনকে আসামি করে মুগদা থানায় মামলা করেন গৃহকর্ত্রী ইতি আক্তার সাফিয়া। ওই দিনই তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

ইতি আক্তারের ভাষ্য, রাত সোয়া আটটার দিকে তিন পুলিশ সদস্য বাসার গেটে এসে ইতি আক্তারের স্বামী শহিদুল ইসলামের খোঁজ করেন। পরে বাসায় ঢুকে তিনজন নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেন। শহিদুলকে তারা বলেন, তুই মাদক সেবন করিস, আমাদের সঙ্গে থানায় চল। এ সময় গ্রেফতার তিন পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে ছিলেন।

গ্রেফতাররা তখন বলেন, এক লাখ টাকা না দিলে শহিদুলকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। আর বাঁচতে চাইলে এক লাখ টাকা দাবি করেন তিনজন। একপর্যায়ে তারা ৫০ হাজার টাকায় বিষয়টি রফার জন্য চাপ দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তিন পুলিশ সদস্য কোন থানা থেকে এসেছেন, সেটি জানতে চান শহিদুলের ভাতিজা তৌহিদুল ইসলাম (ইমন)। তখন তারা সেটি জানাতে অস্বীকৃতি জানান। ইমনের সন্দেহ হলে তিনি ঘরের বাইরে গিয়ে ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানান। ৮-১০ মিনিট পর মুগদা থানা-পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম আকতার হোসেনের একটি দল তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বলেন, গ্রেফতার তিনজনের পূর্বের ইতিহাস ভালো নয়। তাদের মধ্যে হাসান আল বান্নার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা রয়েছে। নাসিদুল ইসলাম ও বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর থানায় গাড়িতে তুলে অর্থ আদায়ের অভিযোগে মামলা আছে। এসব অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে।

পুলিশ জানায়, নাসিদুল ও বেলালের বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্টে শাহজাহানপুর থানায় গাড়িতে তুলে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে দুটি মামলা হয়। মামলা দুটির তদন্ত করেছিলেন তৎকালীন শাহজাহানপুর থানার এসআই আবুল আনসার। তিনি এখন মুগদা থানায় কর্মরত আছেন।

এসআই আবুল আনসার বলেন, ওই ঘটনায় নাসিদুল, বেলালসহ আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। অন্য তিনজনের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য এবং দুজন নাসিদুল ও বেলালের পরিচিত। তারা পুলিশ পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে গাড়িতে তুলে জিম্মি করে অর্থ আদায় করছিলেন। একটি ঘটনায় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আদায় করেছিলেন।

ব্যারাক থেকে বেরিয়ে চাঁদাবাজি

ডিএমপির রিজার্ভ ও কল্যাণ ফোর্স সূত্র জানায়, সাময়িক বরখাস্ত হলেও তিনজন এখনো পুলিশ সদস্য। তারা তিনজনই রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের ব্যারাকে থাকেন।

যারা ব্যারাকে থাকেন, সন্ধ্যা সাতটার পর তাদের অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ অনুমতি ছাড়া বাইরে যান, তাহলে রোল কলের সময় সেটি ধরা পড়ে। শনিবার এই তিনজনের অনুপস্থিতির বিষয়টি সন্ধ্যা সাতটার সময়ই ধরা পড়ে। রাতে মুগদা থানা-পুলিশ তাদের গ্রেফতারের কথা জানায়।