সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে নয় জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার মধ্যরাতে ও মঙ্গলবার ভোরে এসব ঘটনা ঘটে।
র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কুমিল্লায় ২, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ২, চট্টগ্রামে ১, নারায়ণগঞ্জে ১, চুয়াডাঙ্গায় ১ জন, দিনাজপুরে ১ জন, ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ১ জন, নেত্রকোনায় ১ জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ১ জন নিহত হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নিহতের সবাই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। কারও কারও বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় নিহতের বেশির ভাগই মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করছে র্যাব ও পুলিশ। গতকালও সারা দেশে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়জন মারা যান।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দু’জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। সৈয়দপুর পুলিশ জানায়, দুই জন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জনি (২০) ও শাহীন (৩০) কে আটক করে সৈয়দপুর থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় গোলাহাট বদ্ধভূমিতে মাদকের বড় চালান লুকিয়ে রেখেছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশ জনি ও শাহিনকে নিয়ে গোলাহাট বদ্ধভূমি এলাকায় গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক ব্যবসায়ীরা ককটেল ছোড়ে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। গোলাগুলি শেষে জনি ও শাহিনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাচ্চু খান (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২২ মে) ভোরে আড়াইহাজারের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাতগ্রাম ইউনিয়নের দেয়াবৈ মেইন রোড এলাকায় এই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। নিহত বাচ্চু খান রাজধানী ঢাকার উত্তরার উত্তরখান এলাকার আশরাফ খানের ছেলে।
র্যাব-১ এর পূর্বাঞ্চল ক্যাম্পের এডিশনাল এসপি আনোয়ার হোসেন ও আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে র্যাব-১ একটি বিদেশি পিস্তল ও ১০ হাজার দুইশ’ ইয়াবা জব্দ করে। নিহত বাচ্চু খানের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
কুমিল্লা অফিস: কুমিল্লায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শরীফ ও পিয়ার নামে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ২ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে জেলা সদরের অদূরে বিবির বাজার অরণ্যপুর এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, একটি পাজারো জিপ, ৫০ কেজি গাঁজা এবং ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানকালে কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রুপ কুমারসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সাদু (৩৮) নিহত হয়েছেন। সোমবার (২২ মে) রাত পৌনে ২টার দিকে আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনের অদূরে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, আলমডাঙ্গা স্টেশনের পশ্চিম দিকের একটি জঙ্গলের ভেতরে ৮-১০ জন মাদক বিক্রেতা অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল ওই স্থানে অভিযান চালায়। রাত দেড়টার দিকে পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মাদক বিক্রেতারা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কামরুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রবাল হোসেন নামে (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ কমপক্ষে ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিরামপুর থানা পুলিশ জানায়, সোমবার রাত ৩টার দিকে বিরামপুর পৌর এলাকার মনিপুর নামক স্থানে পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালালে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রবালকে উদ্ধার করে তাকে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসক প্রবালকে মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নগরীর বায়েজিদ থানাধীন ডেবারপাড় এলাকায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শুক্কুর আলী (৪৫) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ছাগলনাইয়া (ফেনী) প্রতিনিধি: ফেনীতে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সোমবার রাতে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৯) নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার রুপকানিয়া গ্রামের হাজী আবদুল করিমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় ডাকাতি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ আমজাদ হোসেন (৩২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি জেলা শহরের পশ্চিম নাগড়া এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে। তিনি তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে পুিলশ। এ ছাড়া তার নামে হত্যা, বিস্ফোরক ও চুরিসহ বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ধন মিয়া (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় র্যাব-১০ এর সদস্যদের সঙ্গে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ধন মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় তিনটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।