দেশব্যাপী পুলিশের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের প্রথম দিনে ২৪ ঘন্টায় ঢাকায় মাদকবিক্রি ও সেবনের দায়ে ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বৃহস্পতিবার রাতে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
এ নিয়ে গত ৪ মে র্যাবের বিশেষ অভিযান শুরুর পর থেকে ছয়জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে। জব্দ করা হয়েছে কয়েক লাখ ইয়াবা বড়ি।
এদিকে রংপুরে ২৪ ঘন্টার অভিযানে ৫১ জন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া পহেলা রমজান থেকে দেশের ৬৪ জেলায় আলাদাভাবে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে পুলিশ। ১০ দিনের এ অভিযান শেষ হবে আগামী ২৬ মে।
সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করতে পুলিশ-র্যাবকে নির্দেশ দেন। মাদক সেবনকারী, ব্যবসায়ী, উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর থেকে মাদক প্রতিরোধী কার্যক্রম জোরদার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯০ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের হেফাজত থেকে ৪ হাজার ৯৯৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৬৮৪ গ্রাম হেরোইন, ৭ কেজি ৪১০ গ্রাম গাঁজা, ৮ বোতল ফেনসিডিল ও ৪০ টি ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৬৮টি মামলা করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বৃহস্পতিবার রাতে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র্যাবের বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। উপজেলার ৪ নম্বর বেড়িবাঁধ এলাকার তাঁতীপাড়া ঘাটে এ সংঘর্ষে নিহতের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে র্যাচব ৬ কেজি ৭শ’ গ্রাম গাঁজা, ২টি পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি, ২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে।
র্যাব-৫-এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের এএসপি আবুল খায়ের জানান, প্রতিদিনের মতো র্যাব বৃহস্পতিবার রাতে মাদকবিরোধী অভিযানে বের হয়। এ সময় গোপন সংবাদে জানতে পারে তাঁতীপাড়া ঘাটে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী মাদকদ্রব্য হস্তান্তর করছে। র্যাসবের একটি দল ঘাটে পৌঁছালে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি চালালে র্যা বও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় র্যাাবের গুলিতে এক মাদক ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হলেও অন্যরা পালিয়ে যায়। আহত মাদক ব্যবসায়ীকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে শুক্রবার সকালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কিশোরগঞ্জ অফিস জানায়- কিশোরগঞ্জে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ১ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ১৭ দিনে জেলায় ৭৪ জন মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে নূন্যতম ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড প্রদান করে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা পুলিশ বিভিন্ন মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য অপরাধে আরও ১৪৫ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মোহাম্মদ সাঈদের নেতৃত্বে গত ১৭ মে মাদকবিরোধী অভিযানে গাঁজা ও ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক করার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। শহরের গাইটাল এলাকায় এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় ইয়াবাসহ আটক শহীদুল ইসলাম (৩৫) ও আব্দুর রহমানকে (২২) দেড় বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং বিশ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া গাঁজাসহ আটক মোশারফ হোসেন মুকুলকে (২৩) এক বছরের কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৬ মে কিশোরগঞ্জে ১৩২ লিটার চোলাই মদসহ আনন্দ রবিদাস (২৩) ও মো. জসিম মিয়া (৩০) নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শহরের রথখোলা এলাকার পিডিবি অফিসের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৮৮টি পলিপ্যাকে ১৩২ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
গত ১৩ মে র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে ১১ জনকে আটক করার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আটজনকে ইয়াবাসহ এবং তিনজনকে গাঁজাসহ আটক করা হয়। দণ্ডিতরা হলো কালাচান, ভজন সরকার, আবুল কাশেম, তারেক রায়হান, শেখ আহসানুল হক কামাল, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. কাঞ্চন মিয়া, মো. সালাহ উদ্দিন, শেরে আলম চৌধুরী, মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. জসিম উদ্দিন। তাদের বাড়ি পশ্চিম তারাপাশা ও বত্রিশ এলাকায়।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত ১৬ মে শহরে মাদকবিরোধী এক অভিযান পরিচালনা করে মো. আলামিন (২৪), মো. মিজান (২৭), জীবন সাহা (৩৫) ও মো. রসুল (২৫) নামের চার গাঁজাসেবীকে গ্রেফতার করে। পর তাদের প্রত্যেককে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা ডিবি পুলিশ গত ১৪ মে ৮০০ পিস ইয়াবাসহ খাইরুল ইসলাম (৩০) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। পরে থানায় মামলা করে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১ মে হোসেনপুর উপজেলায় দেশি অস্ত্র ও ইয়াবাসহ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম বাবুল ও তার স্ত্রী শেফালি আক্তারসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে হোসেনপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা দায়ের করে বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, অভিযান অব্যাহত থাকবে। রোজার মধ্যেই মাদক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আসবে।