রাজপথের বিরোধীদল খ্যাত বিএনপি নানান কর্মসূচি দিলেও মাঠ দখলে থাকছে আওয়ামী লীগের। রাজনৈতিক মাঠে বিএনপিকে জায়গা দিতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এটাই আওয়ামী লীগের কৌশল। সংসদ ও সরকারের মতো রাজপথও নিজেদের দখলে রাখবে। এজন্য এরই মধ্যে জেলা কমিটিকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
১১ ফেব্রুয়ারি ছিল সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রা। আওয়ামী লীগও একই দিনে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব দিয়ে এই কর্মসূচি সফল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি জেলা কমিটিগুলো নিয়ে চিঠিও দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বছরব্যাপী সাংগঠনিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।’
এ নিয়ে জাগো নিউজের প্রশ্ন ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে- বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা দিলে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠ দখলে রাখে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক মাঠে জায়গাই পাচ্ছে না বিএনপি। এমনটা কেন?
জবাবে দলটির নেতারা বলছেন, ‘জনমনে যেন আতঙ্কের সৃষ্টি না হয় এবং বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে জামায়াত-শিবির অনুপ্রবেশ করে কোনো ধরনের নাশকতার সৃষ্টি যেন করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি (রাজনৈতিক) প্রতিদিন আছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে যে কর্মসূচি তা পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি নয়। জনগণের জানমাল রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। তাই নির্বাচনের আগে আমাদের দলীয় কর্মসূচি থাকবে।’ এর আগেও বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি একই কথা বলেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। বিএনপি-জামায়াত যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করলেই জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তারা আবার নাশকতা, পরিবহনে আগুন, মানুষ পোড়ানো শুরু করে কি না- এই ভয়, আশঙ্কার উদ্ভব হয়। জনমনে যেন আতঙ্কের সৃষ্টি না হয় এবং বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে জামায়াত-শিবির অনুপ্রবেশ করে কোনো ধরনের নাশকতার সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী সতর্ক অবস্থান নেয়। বিএনপির নেতাদের নিজ দল ও জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে আওয়ামী সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে। তবে আওয়ামী লীগ কোনোভাবে কোন উসকানি দেবে না বা উসকানিতে পা দেবে না। কোনো দলের যে কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে না।
এ বিষয়ে দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপি এরই মধ্যে কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। যার কারণে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সব সময় সতর্ক অবস্থানে থাকে। আমরা সহিংসতা করছি না বা পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছি না। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কর্মসূচি দিচ্ছি। মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। যাতে জনমনে স্বস্তি কাজ করে, এলাকায় এলাকায় শান্তি বিরাজ করে। আমরা প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করি না, শান্তি ও সহাবস্থানে বিশ্বাস করি।’
তৃণমূলে দেওয়া আওয়ামী লীগের চিঠি
সম্প্রতি তৃণমূলে চিঠি পাঠাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ও সভাপতির নির্দেশ সম্বলিত এরকম একটি চিঠি জাগো নিউজের হাতে এসেছে। জেলা কমিটিকে লেখা ওই চিঠিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বছরব্যাপী সাংগঠনিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াত অশুভশক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ‘শান্তি সমাবেশ’ আয়োজন; পাশাপাশি ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মার্চ মাসব্যাপী বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি গ্রহণের সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাদের নিম্ন লিখিত নির্দেশাবলি পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’
সাংগঠনিক নির্দেশনা
ওই চিঠিতে চারটি সাংগঠনিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এগুলো হলো- ১. ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ আয়োজন।
২. ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সারাদেশে প্রভাতফেরি, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনাসহ বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ।
৩. ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস পালন, ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ।
৪. সারাদেশে ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযান’ জোরদার করা এবং যে সব সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্রুত সে সব শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা। মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক উপজেলা/থানা/পৌর/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড ও ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন করা।