মাটির নিচে যাচ্ছে না বিদ্যুৎ লাইন

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এক বছর আগে প্রায় ২০ হাজার ৫০১ কোটি টাকার এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। অথচ প্রকল্প গ্রহণের আগে কোনো ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। এখন ব্যয় সমান রেখেই প্রকল্পের দুটি শর্ত থেকে সরে আসতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ।

মঙ্গলবার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) উপস্থাপন করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অনুমোদিত ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) আওতাধীন এলাকায় ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। এখন একনেক সভায় প্রকল্পটি থেকে প্রদত্ত দু’টি শর্ত থেকে অব্যাহতির বিষয়টি উপস্থপন করা হচ্ছে।

এ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ২০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৫৫৩৬.৯৬ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য ১৩৮৪৪.২৯ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল ১১২০.২৭ কোটি টাকা। চীন সরকারের কাছ থেকে জিটুজি ভিত্তিতে কনসেশনাল ঋণ নেয়ার চুক্তি হয়েছে। এটি বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় ডিপিডিসি কর্তৃক বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদকালে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত বড় একটা প্রকল্প হাতে নেয়ার আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি না করা এক ধরনের দায়িত্বহীনতা। প্রকল্প গ্রহণ করার আগে কী পরিমাণ ব্যয় হতে পারে তা চিন্তা না করেই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল। কিন্তু মাটির উপরিভাগে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সমপরিমাণ ব্যয় হবে না। তাই প্রকল্পের বিষয়টি নতুন করে ভাবা উচিত। নাহলে বিশাল পরিমাণ অর্থ অপচয় হতে পারে।

২০২১ সালের মধ্যে সারা দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে সরকার ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিপিডিসি এলাকায় সুষ্ঠু ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ ও সংস্কার এবং নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।

ওই সময় দুটি শর্ত দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুতের সাব স্টেশন আন্ডাগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং আন্ডার গ্রাউন্ড চ্যানেলগুলো মাল্টিপারপাস হতে হবে যাতে কেবল অপারেটরদের কেবলসমূহ সেই চ্যানেলগুলো ব্যবহার করতে পারে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

একনেক কর্তৃক প্রদত্ত শর্ত থেকে অব্যাহতি প্রদানের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, একনেক কর্তৃক প্রদত্ত উপরিউক্ত যে দুটি শর্ত দেয়া হয়েছে তা প্রতিপালন করতে হলে নতুনভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। প্রকল্পটির কার্যপরিধি পরিবর্তন করতে হবে। সাধারণত আন্ডারগ্রাউন্ড সাব-স্টেশনের নির্মাণ ব্যয় প্রচলিত ভূ-উপরস্থ সাব-স্টেশনের নির্মাণের ব্যয়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। সঙ্গত কারণেই গত ১০ অক্টোবর ইপিসি ঠিকাদারের সঙ্গে ডিপিডিসির স্বাক্ষরিত বাণিজ্যিক চুক্তিতে উক্ত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় দর নেগোসিয়েশনপূর্বক বাণিজ্যিক চুক্তিটি সংশোধন করতে হবে। ফলে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু এবং বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে গ্রাহকপ্রান্তে নিরবিচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এ অর্থ দিয়ে ডিপিডিসি এলাকায় নতুন ১৩২/৩৩ কেভি এবং ৩৩/১১ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন উপ-কেন্দ্রের কন্ট্রোলরুম, দাফতরিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ; বিদ্যমান ১৩২/৩৩ কেভি এবং ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রসমূহের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা; ১৩২ কেভি এবং ৩৩ কেভি ভূগর্ভস্থ কেবল নেটওয়ার্ক তৈরিকরণ; হাতিরঝিল এলাকার বিদ্যমান ওভারহেড সঞ্চালন লাইনসমূহকে ভূগর্ভস্থ লাইনে রূপান্তরকরণ; বিদ্যমান উপকেন্দ্রসমূহকে অটোমেশন ও কমিউনিকেশন ব্যবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন স্ক্যাডা স্থাপন; আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সসহ টেস্টিং ল্যাবরেটরি নির্মাণ; এবং উন্মুক্ত হ্যাঙ্গারসম্বলিত অত্যাধুনিক মেকানাইজড ওয়্যার হাউজ নির্মাণ করা হবে।

এ প্রকল্পের মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য বেগম শামীমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার প্রজন্য একনেক সভায় উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।