বরগুনার বেতাগী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা, আনসার ভিডিপি’র টিডিপি দলনেতা ও ধ্রুবতারা ইয়থ ডেভেলপমেন্টের জেলার সহ-সভাপতি সুকদেব হাওলাদার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। ছাত্র জীবন থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে মাছ চাষ করে। ফলে পরিবার ও দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কিছুটা হলেও আমিষের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছে।
সরেজমিনে পরির্দশন করে জানা গেছে, মাছ চাষে অক্লান্ত পরিশ্রম আর একনিষ্ট সাধনায় সুকদেবের সফলতা এনেছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে। বিএসএস পাস করে চাকুরি খোঁজ করেনি।
আজ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সকাল ১১ টায় সরেজমিনে পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে সুকদেব হাওলাদারের মৎস্য চাষের খামারগুলো পরির্দশন করে জানা যায় বিস্তারিত তথ্য। এসময় সুকদেব জানায়, ২০০৮ সালে ১০ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করা অবস্থায় আমি মাছচাষে শুরু করি। এরপর ২০০৯ সালে এসএসসি, ২০১১ সালে এইচএসসি ও ২০১৭ সালে বিএসএস পাস করি। পড়ালেখা করে আর কোন চাকুরি খোঁজ করিনি। বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উদ্যোগে মাছচাষের উপর আই এ পি পি, আই সি এম, আই পি এম এবং ডানিডার ডিপিএইচ ’র উপর কয়েকবার প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। এতে মাছচাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়।’
বর্তমানে তাঁর নিজেদের ১ শত ২০ শতাংশ জমিতে ৭টি পুকুরে মাছ চাষ করেছে। ‘সুকদেব মৎস্য পোনা উৎপাদন ও বিক্রয় কেন্দ্র ’ নামে খামার গড়ে তুলেছে এবং সরকারি নিবন্ধন করেছে। পুকুরগুলোতে ভিয়েতনামের কই মাছ, দেশীয় প্রজাতির রুই, কাতলা, লাইলোটিকা, চাইনিজ পুটি, সরপুিট, তেলাপিয়া, পাবদা, শিং , মাগুড়, কাল বাউস, পাঙ্গাস চাষ করা হচ্ছে। কোন কোন পুকুরে এসব দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতি মাছের পোনা চাষ করা হয় এবং পোনা বড় করে বিক্রি করেছে। মাছের পোনা বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি,
পুটিয়াখালী, ফুলতলা, ঝোপখালী, বেতাগী সদর, জলিসা , মোকামিয়া, হোসনাবাদ, বুড়ামজুমদার, বদনীখালী, কাউনিয়া, সড়িষামুড়ি, চান্দখালী, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়া ও রাজাপুরসহ ২০-৩৫ টি জেলা ও উপজেলার মৎস্য চাষীরা এসে মাষের পোনা কিনে নিচ্ছে। মাছের পরিচর্যায় সব সময় ৪ জন লোক কাজ করছেন।
মাছ ধরার কাজে ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করেছে। সুকদেব এবং তাঁর শ্রমিকরা যথারীতি মাছের খাবার দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করে দেওয়া, রোগ নির্নয়সহ চাষের সকল কাজগুলো যতœসহকারে করছেন। শ্রমিক বেলাল ও স্বজল বলেন,‘ আমরা চাষের যখন খাবার দেই, তখন সব মাছগুলো খাবার খাওয়ার জন্য আসে এবং দেখতে বেশ ভালো লাগে।’
এ ব্যাপারে সাংবাদিক মো. কামাল হোসেন খান বলেন,‘ বাজারে মাঝে মাঝে মাছ পাওয়া যায় না , সেসময় সুকদেবের মৎস্য খামার থেকে দেশীয় মাছ কিনে নিই।’
এবিষয় সুকদেব হাওলাদার বলেন,‘ মাছ চাষ করে একদিকে যেমন আনন্দ পাই অপরপক্ষে পরিবার ও দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে নিরালসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মৎস্য বিভাগ যদি অর্থনৈতিকভাবে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে সহায়তা করে তবে ভবিষ্যতে মৎস্য হ্যাচারী করব।
’ সুকদেব আরো বলেন,‘ আমার মাছ চাষের আগ্রহ দেখে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী’র যুবদূত অমিয় প্রাপন চক্রবর্তী এবং ২০১৯ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্তি সচিব শ্যামল কৃষ্ণ কর্মকার পরির্দশন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বেতাগী মৎস্য অধিদপ্তরের করোণাকালীন বিশেষ সহায়তায় প্রনোদনা হিসেবে গত ৩০/০৬/২০২০ খ্রি. তারিখ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা অগ্রনী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করেন। ’
এ বিষয় বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল-রাজীব বলেন,‘ সুকদেব হাওলাদার একজন ভালো মৎস্য উদ্যোক্তা , তাকে মাছ চাষের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে থাকি এবং ভবিষ্যতে করা হবে।’