মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি: প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সারাজীবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে ছায়ার মতো থেকে তার সাফল্যের সহযোগী হয়েছেন, এ কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সময়ে অনেক চড়াই-উৎরাই গেলেও মহীয়সী এই নারী কখনো ভেঙে পড়েননি। বরং বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে নিজের সংসার থেকে রাজনীতি, সবদিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

 

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা (বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব) জীবনে অনেক চড়াই-উৎড়াই পার হয়েছেন, কিন্তু কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। বাবার পাশে থেকে মা সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন। প্রত্যেকটা কাজে তিনি বাবার পাশে ছায়ার মতো থাকতেন। এমনকি বাবা বিএ পরীক্ষা দেওয়ার সময় মা কলকাতায় চলে আসেন। মার ধারণা ছিল, তিনি থাকলে বাবা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

 

এ সময় বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বই থেকে কিছু অংশ পড়ে শোনান  প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের বঙ্গমাতার অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকে মা পাশে থাকায় বাবা সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক জীবনেও তিনি সব সময় বাবার পাশে ছিলেন। তিনি বলতেন, রাজনীতি করো আমার আপত্তি নেই, কিন্তু পড়াশোনা করো। আমার দাদাও বলতেন, যে কাজই করো তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে।

 

রাজনীতি করতে কোনোদিন আপত্তি করেননি, কোনেদিন বাধা দেননি, বরং বঙ্গমাতা সব সময় বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন, জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ’১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে বাবা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। যে বয়সে বাবার হাত ধরে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়, আমাদের সে সুযোগ হয়নি। জেলে যখন আব্বার সঙ্গে আম্মা দেখা করতে যেতেন, তিনি বলতেন, ঘর-সংসার নিয়ে তোমার (বঙ্গবন্ধু) চিন্তা করতে হবে না। আমি দেখব। তিনিই দেখতেন, আমাদের লেখাপড়া, দলের কাজ।

‘একের পর এক মিথ্যা মামলা। সেসব নিয়ে উকিলের কাছে দৌড়ানো। সবকিছুই তিনি করতেন। তার একটা দৃঢ়তা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, এটাই ছিল আমার আব্বার মূল লক্ষ্য। এটা পৃথিবীর কেউ না জানলেও আমার মা জানত। কারণ, আমার মাকে তিনি সবকিছুই বলতেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ আর পাঁচটি নারীর মতো নয়, তিনি বঙ্গবন্ধুকে দেশের জন্য আত্মনিয়োগ করতে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। এটা দরকার, ওটা দরকার, কখনোই তিনি না বলতেন না। সংসারের কোনোকিছুর জন্যই তাকে চাপ দিতেন না। সবকিছু নিজে করতেন। এমনকি ৭ মার্চের ভাষণে অনেকে বলেছেন এটা বলতে হবে, ওটা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে মা বলেছিলেন, তোমার মনে যেটা আসবে, সেটাই বলবে। কারণ, তুমি এ দেশের মানুষকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছ।

 

১৫ আগস্টে ঘাতকের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গমাতার দৃঢ়তার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্টেও তিনি ঘাতকদের বলেছিলেন, আমি কোথাও যাবো না। আমাকেও তোমরা হত্যা করো। এই মুহূর্তে মানুষ জীবন ভিক্ষা চায়। আমার মা জীবন ভিক্ষা চায়নি। আব্বার সহযোগী হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাবা-মায়ের কাছ থেকে যেটা শিখেছি, সেভাবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

 

এর আগে রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও গবেষণা ক্ষেত্রে অবদান রাখায় চার বিশিষ্ট নারী এবং বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবলকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক ২০২৩’ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে প্রতি বছর আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচজনকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ জাতীয় পদক দেওয়া হয়। এ বছর রাজনীতিতে একজন; শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে দুজন, গবেষণায় একজনসহ মোট চারজন বিশিষ্ট নারী এবং বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে এ পদক দেওয়া হয়েছে।

রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (মরণোত্তর), শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অণিমা মুক্তি গমেজ ও মোছা. নাছিমা জামান ববি, গবেষণায় ড. সেঁজুতি সাহা এবং বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২৩’ পেয়েছে।