মহাসমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রধানমন্ত্রীর অন্তরজ্বালা বাড়িয়েছে: রিজভী

লেখক:
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতিকে প্রধানমন্ত্রী ভাল চোখে দেখেননি মন্তব্য করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এত মানুষের সমাগম দেখে তার অন্তরজ্বালা বাড়িয়েছে। এজন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সাংবাদিকসহ বিএনপি নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করান।

 

বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়ালি ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গতকালের প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্যে প্রমাণিত হলো, তিনি নানা ধরনের ফন্দি করে আবারও ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে চান। তিনি রাজনৈতিক সমঝোতা, সম্প্রীতি এবং অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাসী নন। তাই কেউ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দাবি করলেই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন।

 

রিজভী বলেন, বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও বেশি বেপরোয়া ও নারকীয় তাণ্ডবে লিপ্ত হয়েছে। তারা মরণঘাতি অভিযানে আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছে।

‘২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচিতে ঢাকাসহ সারাদেশে তারা হত্যার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। গতকালের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিবেকহীন পুলিশ বাহিনী বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতে আরও বেশী উৎসাহী হয়ে উঠেছে। ২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর আওয়ামী পুলিশ রক্তের যে হোলিখেলা খেলেছে, সেটি নজিরবিহীন ও পৈশাচিক ঘটনা।’

 

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন, তাতে সত্যের লেশমাত্র নেই। সারা জাতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিবিড়ভাবে তার সেসব কথা পর্যবেক্ষণ করেছে। সেটাকে তিনি পরিবর্তন করবেন কীভাবে? জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন বলেছে, মুখোশপরা হেলমেটধারী ব্যক্তিরা সরকারের লোক। এভাবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের সংস্থারা সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে এখন ওয়াকিবহাল।

‘আওয়ামী লীগ শুধু বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের আক্রমণ ও জখম করছে না, তারা খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকেও রক্তাক্ত করছে। আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাক্ষুধা এতটাই তীব্র যে, তারা সারাদেশকে গোরস্থান বানিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়। আ.লীগের টপ টু বটম নেতাকর্মীদের ভাষা গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদের মতো। এদের কাছে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধ, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের কোনও মূল্য নেই। এরা অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রভু হয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। সেই কারণেই বিরোধীদলের আওয়াজকে নিস্তব্ধ করার জন্য নিজেদের মনের মতো করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাজিয়েছে।’

রিজভী আরও বলেন, সরকার গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ একযোগে কাজ করছে। এরাই সারাদেশে গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক ঠুকছে। বিরোধীদলকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্য একটাই, গত দেড় দশকের তাদের লুণ্ঠন ও অর্থপাচারের কাহিনীগুলো যেন সাধারণ জনগণ জানতে না পারে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের এক্সিবিশনে মানুষের পেট ভরছে না। বিপুল জনগোষ্ঠী অনাহারে অর্ধাহারে কোনরকমে বেঁচে আছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এতটাই বেড়েছে, সেটা আমাদের গ্যালাক্সি ছাড়িয়েও আরও ঊর্ধ্বগামী হয়েছে। আলুর কেজি ৬০-৭০ টাকা। অথচ সরকার দাম নির্ধারিত মূল্য ছিল ৩৫ টাকা। পেঁয়াজের বর্তমান মূল্য কেজি প্রতি ১৩০-১৪০ টাকা। সাত দিন আগে ছিল ১০০ টাকা। আর সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৬৫ টাকা। এভাবে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সারা জাতি হতভম্ব ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ তার উপার্জিত পয়সা দিয়ে খাবার কিনতে পারছে না। অসাধু পণ্য সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার। কারণ, এরা সবাই আ.লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট।

 

জেলখানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির যেসব নেতা, যারা একসময় মন্ত্রী-এমপি ছিলেন; তাদেরও ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না। কারাগারে বিএনপি নেতাদের দিনের বেলায়ও সেলের ভেতরে আটকে রাখা হচ্ছে। ভয়ঙ্কর হয়রানির মধ্যে বিএনপি নেতারা দিন কাটাচ্ছেন। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরেও জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের ভাগ্যের লিখন হয়ে গেছে। গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর আজকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এটা সরাসরি মির্জা আব্বাসের ওপর সরকারি নিপীড়ন। কারাগারে অসুস্থ বিএনপি নেতাদের হাসপাতালের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমি বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর কারা কর্তৃপক্ষের নিপীড়ন ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ জানাচ্ছি।