মহান মুক্তিযুদ্ধে লুসি হল্টের অবদান এবং বরিশালের শফিকুজ্জামানের নিরলস প্রচেষ্টা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago
মিস লুসি হল্ট

সোহেল আহমেদ।

একজন ব্রিটিশ তরুনী মিস লুসি হল্ট। নার্সিং পেশায় নিজেকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে ১৯ শতকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের পাকবাহিনীর চরম নৃশংসতা আর হত্যাযোগ্যে যখন এদেশের মানুষ নিরুপায় তখনই থেমে যায় তার কাজ। তৎকালিন সময়ে জীবনের ঝুকি জানা সত্তেও ফিরে যান নি নিজ দেশে। মিশে গেছেন এদেশর মাটি ও মানুষের সাথে।

জীবনের সেই ঝুকি মাথায় নিয়েই মুক্তি যুদ্ধের নানা তথ্য পাঠিয়েছেন ইউরোপে। সহায়তা করেছেন এদেশের মুক্তিকামী সাধারন মানুষদের। বিনীময়ে কি পেলেন এদেশ থেকে? এমন প্রশ্ন যখন ঘোড়পাক খাচ্ছিলো ঠিক তখনি মানবতার অগ্রদূত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালে হাজির। মুক্তিযুদ্ধকাল সময়ে অবদান সরুপ ৩০ বছরের সেই তরুনী আজকের ৮৭ বছরের প্রবীণ লুসি হল্ট গ্রহন করবেন ফিমুক্ত দ্বৈত নাগরীত্ব পাসপোর্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে লুসি হল্টকে এটি প্রদান করবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়, মিস লুসি হল্টের ৫৭ বছর ধরে বরিশালে মানবেতর জীবনযাপন এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদান করা বিষয়ে ২০১৬ সালের শেষ দিকে ডিবিসি চ্যানেলে অপূর্ব অপুর এক প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ওই সংবাদের সুত্র ধরেই বরিশালের নাগরীক সমাজ তথা সরকারের বর্তমান যুগ্ন- সচিব ড. শফিকুজ্জামানের নজড়ে আসে।

এর আগে দিপু হাফিজুর রহমান নামের একজন উন্নয়নকর্মী সিটিজেন জার্নালিজম বাংলাদেশ” নামক এটুআই চালিত ফেইসবুক গ্রুপে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লুসি হল্টের জীবনকাহিনী বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন।

এরপর গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বরিশালের সাবেক জনপ্রিয় জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো: সাইফুজ্জামান সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিন প্রেরণ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারোনে তা আর এক বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। বদলি হন সাইফুজ্জামান থমকে যায় লুসি হল্টের ফিমুক্ত ভিসা প্রক্রিয়া।

তারপরেও লুসি হল্টের বরিশালের মাটিতে অসহায়ত্ব বরন করে জীবনযাপন করাটাকে এক প্রকার লজ্জিত বলে মনেকরেন বরিশালেরই কৃতিসন্তান সরকারের ওই সময়ের উপসচিব ড. শফিকুজ্জামান। তিনি দিপু হাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সেচ্ছাসেবীদের নিকট পুনরায় লুসি হল্টের বিষয়ে অাবগত হন। একপর্যায়,গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে লুসি হল্টের ফিমুক্ত ভিসা প্রদানসহ বিভিন্ন সুবিধা আদায়ে সরকারেরর সংশ্লিষ্ট বিভাগে একের পর এক যোগাযোগ অব্যহত রাখেন।

শফিকুজ্জামানের এই নিরলস পরিশ্রমের ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের ৫ তারিখ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে লুসি হল্টের ১৫ বছরের জন্য ফিমুক্ত একটি মাল্টপল ভিসা প্রদানের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। আর এতে বরিশালের সিটিজেন জার্নালিস্টসহ বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে অসামান্য অবদান রাখেন শফিকুজ্জামান।

তার হাতে লুসির পাসপোর্ট তুলে দেন মি. ডানিয়েল। তারপর তিনি এটি মাল্টিপল ভিসার জন্য পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন উইং কর্মকর্তা মিস মনিরা হকের নিকট হস্তান্তর করেন। এমনকি ওই দিনই তিনি লুসি হল্টের দ্বৈত নাগরীত্বের জন্য সরকার নির্ধারিত ফিও জমা দেন।

লুসি হল্টের ফিমুক্ত ভিসার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের বর্তমান যুগ্ন- সচিব ড. শফিকুজ্জামন এ প্রতিবেদককে জানান,একজন যুদ্ধাহত বিদেশী নারী লুসি হল্টের জন্য এতো দিন আমরা কিছু করতে পারিনি। তারমত ( লুসি হল্ট) ৮৭ বছরের প্রবীণ মানুষ এদেশে অসহায়ত্ব বরন করবে এটাতো মেনে নেয়ার মত নয়। তাও আমারই বরিশালের মাটিতে। এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুজ্জামান বলেন, বরিশালের সাবেক ডিসি গাজী সাইফুজ্জামানের তৎপরতায় বিষয়টি আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজড়ে আনতে সক্ষম হই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে লুসি  হল্টের বিষয়ে দেখবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। যে কারোনে আজকের এ সফলতা অর্জনে আমরা বরিশালবাসী দ্বায়মুক্তির পথে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লুসি হল্টের প্রতি সম্মান জানাতে ডিবিসি নিউজের অপুর্ব অপু,উন্নয়নকর্মী দিপু হাফিজুর রহমান, সাবেক ডিসি গাজী সাইফুজ্জামান,বর্তমান ডিসি হাবিবুর রহমানেরর পাশাপাশি বরিশালের সিটিজেন জার্নালিষ্টদের একটি বিশেষ ভূমিকা অব্যহত ছিলো।

 

এদিকে,গত বছরের ১৬ ই ডিসেম্বর লুসি হল্টের জন্মদিন উপলক্ষে দিপু হাফিজুর রহমানেরর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্টানে ড. অংশ গ্রহন করে ফিমুক্ত পাসপোর্ট এর আবেদন পত্রটি গ্রহন করেছিলেন। ফিমুক্ত ভিসা প্রদানের এ কাজটি সহজ সাধ্য ছিলো না জেনেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অাস্থা রেখে এগিয়ে যান শফিকুজ্জামান। ফলে নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে লুসি হল্টের ফিমুক্ত ভিসা প্রদানের সব প্রক্রিয়া সম্পুর্ণ করেন। লুসি হল্ট পেয়ে যান তার কাঙ্ক্ষিত সম্মান। দীর্ঘ্য ৫৭ বছরের অপেক্ষা এখন শুধু কয়েক ঘন্টার ব্যাপার।

লেখক: সোহেল আহমেদ।