মশা নিধনে ডিএনসিসির নতুন থেরাপি ‘বিটিআই’

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রোববার থেকে ব্যাসিলাল থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। মশা নিধনের ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে কোনও প্রকার অবহেলা নেই। তারপরও কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

 

উদ্বোধন শেষে নগরভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

 

এসময় ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, রোববার থেকে মশা নিধনে ‘বিটিআই’ প্রয়োগ শুরু হবে। এর পাশাপাশি ডেঙ্গু দমনে নিয়মিত সর্বোচ্চ তদারকি, ওষুধ প্রয়োগ এবং অভিযান চলছে, চলবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কারও কোনও অবহেলা নেই, তারপরও সংশ্লিষ্ট সবার আরও বেশি সতর্ক তদারকি প্রয়োজন। এ ছাড়া, নগরবাসীকেও বেশি করে সচেতন হতে হবে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার মশা মারতে প্রতি বছরই নতুন নতুন পদ্ধতি আর প্রকল্প নিচ্ছে উত্তর সিটি করপোরেশন। এক প্রকল্প সফল না হলে পরের বছর মশা মারতে নেওয়া হচ্ছে নতুন প্রকল্প। অতীতে করা বিভিন্ন প্রকল্পে সুফল না পেয়ে এবার ব্যাসিলাল থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিসের (বিটিআই) মাধ্যমে মশক নিধন কাজে সফল হওয়ার প্রত্যাশা করছি।

দুই সিটির মশা নিধন কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত ঢাকার মশা মারার ক্ষেত্রে কোনও প্রকল্পই পুরোপুরি সফল হয়নি। বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশেও গেছেন সংশ্লিষ্টরা। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহরে থেকে ডিএনসিসির একটি প্রতিনিধি দল প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় ফিরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে- এত দিনের মশকনিধন পদ্ধতিকে ‘ভুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এরপর সেই ‘ভুল’ থেকে বের হয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে আগামী রোববার থেকে বিটিআইয়ের মাধ্যমে লার্ভিসাইড প্রয়োগ শুরু করবে ডিএনসিসি।

জানা গেছে, বিটিআই পদ্ধতি প্রাকৃতিক, সাশ্রয়ী এবং টেকসই। প্রধানত অণুজীব থেকে সৃষ্ট কম-বিষাক্ত কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বিটিআই। এটি প্রচুর পরিমাণে টক্সিন তৈরি করতে পারে, যার প্রভাবে কীটপতঙ্গের খাদ্যগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা ব্যাসিলাল থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) নামক ব্যাকটেরিয়া ডিএনসিসির কাছে এসে পৌঁছেছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিটিআই এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। মশা মারতে এটি অনেকটা লার্ভিসাইডের মতো স্প্রে করতে হয়। জলজ আবাসস্থলে এ কীটনাশক প্রয়োগ করলে এটি মশা-মাছির বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। বিটিআই ব্যবহারে মানুষ, পোষা প্রাণী, গবাদিপশু এবং উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি হয় না। তবে চোখে লাগলে দৃষ্টিশক্তি এবং ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

নদী-নালা, পুকুর ও খালের মতো জলাশয়ে বিটিআই স্প্রে করা যায়। বদ্ধ পানিতে বিটিআই প্রয়োগ করলে এটি মশার লার্ভাকে মেরে ফেলে। তা ছাড়া ফুলের টব, খালি পাত্র ও টায়ারে জমে থাকা পানিতেও ব্যবহার করা যায়। ১০০ লিটার পানিতে ১৫ গ্রাম বিটিআই মিশিয়ে দেড় বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছিটিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ওষুধটির কার্যকারিতা থাকে ৩০ দিন।

 

বিটিআই সম্পর্কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, বিটিআই মশা দমনে খুবই কার্যকরী। আমি গবেষণা করে দেখেছি, বিটিআই প্রয়োগের ফলে দুই ঘণ্টার মধ্যে মশা মারা যায়। বিটিআই সঠিক সময়, সঠিক মাত্রা, সঠিক জায়গা ও সঠিক সময়ের ব্যবধানে প্রয়োগ করতে পারলে সফলতা আসবে।

বর্তমানে মশার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বলে বিটিআই আমদানি করাকে ডিএনসিসির কার্যকর উদ্যোগ বলে জানান কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. বে-নজীর আহমেদ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, বিটিআই সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিটিআই খুব একটা কার্যকর হবে বলে মনে হচ্ছে না। এটি অবশ্য কিউলেক্স মশার বিরুদ্ধে বেশি কার্যকর। লার্ভিসাইড যদি এডিস মশার উৎপত্তিস্থলে সঠিকভাবে না পৌঁছায়, তবে তা কার্যকর হবে না।

ঢাকা উত্তরের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, সিঙ্গাপুর, ভারতের বিভিন্ন শহর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইন বিটিআই ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ুও এসব দেশের মতোই। তাই, আমাদের এখানেও এর সফলতা আসার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

প্রসঙ্গত, এ বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭৩ জন এবং আক্রান্ত হয়ে ৫৭ হাজার ১২৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩১ হাজার ৪৬১ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫ হাজার ৬৬৬ জন।