বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি)। তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়নি। বৈদেশিক অর্থসহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগুলো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে করতে হয়। এ বিধিও মানেনি সংস্থাটি।
এই প্রেক্ষোপটে জিসিসির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ১৮ আগস্ট এ সংক্রান্ত চিঠি জিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
একই সঙ্গে অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে এমওইউ না করার জন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গাজীপুর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সোনার বাংলা এমব্যাংকমেন্ট প্রজেক্ট লিমিটেডের মধ্যে গত ৩০ জুন একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সম্পাদিত হয়েছে। সেটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম পক্ষ হিসেবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র স্বাক্ষর করেছেন।
এতে আরও উল্লেখ আছে, দ্বিতীয় পক্ষ বৈদেশিক অর্থ সংগ্রহ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করবে, যা পরবর্তী সময়ে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করবে। এছাড়া প্রকল্পের ফান্ডিং প্রক্রিয়ার জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন ৭ লাখ মার্কিন ডলার ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে প্রসেসিং ফি প্রদান করবে।
বৈদেশিক অর্থসহায়তায় যেকোনো প্রকল্প অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হয়। এই এমওইউ স্বাক্ষরের বিষয়ে এর আগে এ বিভাগকে (অর্থনৈতিক সম্পর্ক) অবহিত করা হয়নি বলেও চিঠিতে জানানো হয়।
এ অবস্থায় বৈদেশিক অর্থসহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সোনার বাংলা এমব্যাংকমেন্ট প্রজেক্ট লিমিটেডের সঙ্গে জিসিসি কেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন ছাড়া এমওইউ সম্পাদন করলো, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমাদের নলেজে আসছে উনারা (গাজীপুর সিটি করপোরেশন) একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এমওইউ করেছেন। কিন্তু নিয়ম হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ করতে হলে মন্ত্রণালয়ের পারমিশন লাগবে। সেই এমওইউতে যেসব শর্ত থাকবে তা সরকারের বিধিবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভেটিং (পরীক্ষা) করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘তাই তারা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কীভাবে এটা করল, সে বিষয়ে আমরা তাদের কাছে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছি।’
মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এমওইউ করার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতির জন্য লিখব, আগে অনুমতি নেয়া হয়নি। তাদের (সোনার বাংলা এমব্যাংকমেন্ট) সঙ্গে এমওইউ হয়েছে, কিন্তু কোনো প্রজেক্ট দাঁড় করানো হয়নি এখনও। বিদেশি দাতব্য একটি সংস্থা থেকে আমাদের সহায়তা দেবে প্রতিষ্ঠানটি, বিষয়টি এমন ছিল।’
‘আমরা এই এমওইউ’র মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম চালাতে চেয়েছি। নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে এমন কিছু প্রকল্পই আমরা নিতে চেয়েছি তাদের সহায়তায়।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের চাওয়া ব্যাখ্যা আমরা দেব। আমার মনে হয় মেয়র স্যারের সঙ্গে কথা বলেন, স্যার এ বিষয়ে ক্লিয়ার বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলমের ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা ধরেননি। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস দেয়া হলেও সাড়া মেলেনি।
অন্যদিকে ইন্টারনেট ঘেঁটে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সোনার বাংলা এমব্যাংকমেন্ট প্রজেক্ট লিমিটেড’ এর বিষয়ে কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন ছাড়া এমওইউ নয়
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান/সংস্থার সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সোনার বাংলা এমব্যাংকমেন্টসহ কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পৌরসভাসহ সিটি করপোরেশনগুলোর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোনো প্রকার প্রাথমিক সমীক্ষা ছাড়া এমওইউ স্বাক্ষরের আগ্রহ প্রকাশ করে পত্র দিচ্ছে। কিছু কিছু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন ছাড়া এসব সংস্থার সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করছেন বলে জানা যায়, যা যথাযথ নয়।
‘এমতাবস্থায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক আর্থিক সহায়তায় পৌরসভাগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যসম্পাদনের জন্য পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এমওইউ/সম্মতিপত্র সম্পাদনে আগ্রহী হলে তা সম্পাদনের আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে’ বলে চিঠিতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা দেখছি অন্যান্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভাগুলোও এই নিয়ম (চুক্তি করার আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন নেয়া) মানছে না। তাই আমরা অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে বলেছি তোমরা যদি এগুলো করতে চাও তাহলে মন্ত্রণালয়ের পারমিশন নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে অনেক মেয়র বা সংশ্লিষ্টরা হয়তো আইন কানুনের বিষয়ে জানেন না। তাই তাদের জানানো হয়েছে।’