 
     মনদীপ ঘরাই একাধারে কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। পেশাগত জীবনে তিনি বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি)। ছাত্রজীবন শেষে তিনি প্রথমে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। এমনকি কর্মব্যস্ত জীবনেও লেখালেখি করছেন নিয়মিত। বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিয়েছেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে। শরীয়তপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন উপজেলা চত্বরে নির্মাণ করেছেন ‘কাব্যমায়া’ নামে কবিতার দেওয়াল। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘একুশ’ নামে উন্মুক্ত পাঠাগার। একজন লেখক হিসেবে সাহিত্যচর্চা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছেন। এডিসি মনদীপ ঘরাইয়ের উদ্যোগে বরিশালে ‘পুরাতন বই দিলে মিলছে গাছ’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মনদীপ ঘরাই একাধারে কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। পেশাগত জীবনে তিনি বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি)। ছাত্রজীবন শেষে তিনি প্রথমে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। এমনকি কর্মব্যস্ত জীবনেও লেখালেখি করছেন নিয়মিত। বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিয়েছেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে। শরীয়তপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন উপজেলা চত্বরে নির্মাণ করেছেন ‘কাব্যমায়া’ নামে কবিতার দেওয়াল। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘একুশ’ নামে উন্মুক্ত পাঠাগার। একজন লেখক হিসেবে সাহিত্যচর্চা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছেন। এডিসি মনদীপ ঘরাইয়ের উদ্যোগে বরিশালে ‘পুরাতন বই দিলে মিলছে গাছ’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
নানাবিধ প্রতিভার এই মানুষটি ছোটবেলা থেকেই হয়তো লেখক হতে চেয়েছিলেন। তাই তো পড়াশোনায় অনাগ্রহ নিয়ে কৈশোর বয়সেই লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার বোন বরাবরই ভালো ফলাফল করতেন। এজন্য বাবা তার বোনকে বিভিন্ন বই উপহার দিতেন। কিন্তু বোন পড়াশোনার ব্যস্ততায় কখনোই বইগুলো পড়তেন না। এ সুযোগে মনদীপ ঘরাই বইগুলো পড়তেন। এভাবেই তো তার পড়ার অভ্যস গড়ে ওঠে। সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর মনদীপের লেখালেখি শুরু হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে এসে প্রথম বসন্তের ছোঁয়া লাগে। সেই সময় থেকে পাকাপোক্তভাবে লেখালেখি শুরু।
তার বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নাম রণজিত কুমার ঘরাই। পিতামহ যেন যথার্থ নাম রেখেছিলেন ছেলের! ‘রণজিত’ অর্থাৎ যুদ্ধ জয় করেছেন যিনি। সাহসী যোদ্ধা রণজিত ১৯৭১ সালে সম্মুখযুদ্ধ করেছিলেন ৯ নাম্বার সেক্টরে। সুন্দরবন এলাকায়। পরে ১৯৭৩ সালের ব্যাচে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। বাবার সান্নিধ্যেই সুশৃঙ্খল শৈশব কেটেছে তার। কর্মজীবনেও হেঁটেছেন বাবার পথেই। বাবার পর্বতসম অর্জনকে কুর্নিশ করে বাবার সুনামটা ধরে রাখতে চেয়েছেন মনদীপ ঘরাই। চেষ্টা করছেন অবিরাম। নিজের মতো করে।
শিক্ষাজীবনে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেছেন। পেশাগত জীবনের শুরুতে দৈনিক প্রথম আলোর সহ-সম্পাদক এবং ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার ও সংবাদ উপস্থাপক ছিলেন। লেখালেখির পেছনে তার মা এবং স্ত্রীর অবদান স্বীকার করেন সব সময়। দাপ্তরিক সময়ের বাইরে বেশি সাপোর্ট পান স্ত্রীর কাছ থেকেই। যে সময়টা স্ত্রীকে দেওয়ার কথা, সেটি তিনি লেখার জন্য দেন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বিষয়টি তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন।
তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অল্প গল্প’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। এ পর্যন্ত তার সাতটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো—উপন্যাস ‘ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়া হয় না’, ‘একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি’, ‘ফুঁ’, কাব্যগ্রন্থ ‘আমাকে বোঝেনি কেউ’, গল্পগ্রন্থ ‘এক কাপ নীল’, ‘রাত তিনটার গল্প’। ‘শেষ পাঁচ দিন’ নামে একটি উপন্যাস, ‘আর কোনো কপি নেই’ নামে আরেকটি বই আসার কথা রয়েছে। ‘আর কোনো কপি নেই’ বইটির একটিমাত্র কপিই প্রকাশ করা হবে। দ্বিতীয় কোনো সংখ্যা থাকবে না বইটির। গল্প-আড্ডায় তিনি এমনটিই জানিয়েছিলেন।
গল্পকার মনদীপ ঘরাই তার গল্পে তুলে ধরেছেন নিজস্ব বোধ ও ব্যক্তিদর্শন। ব্যক্তির আত্মকেন্দ্রীকতাও ফুটে ওঠে মাঝে মাঝে। তার ‘স্বাধীনতা এমনই’ গল্পে দেখা যায়—
‘জিসান বিয়ে করেছে দেড় বছর। বাবা হবে আর মাস দুয়েক পরেই। নিজের পরিবারেও একই রূপে জিসান। ক্ষমতা, কর্তৃত্ব আর ছড়ি ঘোরানোর অভ্যাসটা এখানেও একই রকম। নিজের সন্তানের নাম ঠিক করার ক্ষেত্রেও বউয়ের কোনো কথা শোনেনি। অনাগত ছেলের নাম রাখতে চেয়েছে শৃঙ্খল।’ (ডেইলি বাংলাদেশ, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯)
জীবনের বাস্তবতা, অভিজ্ঞতা, টানাপোড়েন বা শিক্ষার জ্বলজ্বলে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় তার প্রতিটি গল্পে। মানবিকতার নিরন্তর স্লোগান উচ্চারিত হয় এসব গল্পে।
উপন্যাসেও ব্যতিক্রম কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেন সব সময়। মানুষের কথা বলেছেন প্রতিবার। ‘একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি’ উপন্যাসের অংশবিশেষ তুলে ধরছি—
‘নাহিদের বাসায় কত বছর ধরে যে কায়সার যায় না, আজ সেখানে যেতে চেয়ে সেটাই প্রথম মনে হলো। জগতে এই একটা জায়গাই বাকি রয়ে গেছে, যার সাথে বর্তমান কষ্টটা নিয়ে অন্তত আলাপ করে একটু শান্তি পেতে পারে। নাহিদ। ওর রুমটাতে পৌঁছে মনে হলো, বছর বছর আগে যে ঘরে নাহিদকে দেখে গেছে, সেটা ওরকমই আছে। ঠিক ছোটবেলার মতো করে ওর বিছানায় পা তুলে গা এলিয়ে বসল কায়সার। আজ কায়সারের মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না নাহিদ। কায়সার নীরবতা ভেঙে বলল, ‘দোস্ত, কখনো তো তোর কাছে কিছু চাই নি। কিছু একটা কর। কিছু একটা কর দোস্ত। আম্মার জন্য কিছু না করতে পারলে নিজেকে নিজে সারাজীবনও আর ক্ষমা করতে পারব না।’ (অন্যপ্রকাশ, ২০২৩)
গল্প বা উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতায়ও আবেদন তৈরি করতে পেরেছেন মনদীপ ঘরাই। তার ‘পুড়ছে সময়’ কবিতাটি পড়লে সেটা উপলব্ধি করা যায়—
‘ঘড়িতে কাঁটা আছে জানি, ফুল তো নেই!
তবে কেন সযতনে সময়কে দিয়েছ ঠাঁই?
আমার অলস চিন্তা দেব, সময় নিও না।
আমার ব্যস্ত সকাল দেব, সময় নিও না।
জীবন কিংবা যাপন দেব, সময় নিও না।
পরের মাঝে আপন দেব, সময় নিও না।’
(দেশ রূপান্তর, ২৫ আগস্ট ২০১৯)
কিংবা তিনি যখন ‘দুঃখ তুলিতে রং’ কবিতায় বলেন—
‘ঘড়ির কাঁটাগুলো থেমে গেছে হৃদয়ের সাথে;
স্পন্দন নেই ঘড়িতে কিংবা হৃৎপিণ্ডে।
একটা দুশো টাকার দেয়াল ঘড়ি,
কিংবা দুটাকার জন্য খুন হওয়া জীবন দিয়ে
রুখতে পারবো কি সময়ের রথ?
সময় সবার কথা শোনে না।
সবার হৃদয়ে জাল বোনে না।’
(দেশ রূপান্তর, ২৫ আগস্ট ২০১৯)
সব মাধ্যমেই তার বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। কোনো মারপ্যাঁচ নেই। সৃজনের বোধ চকচকে ধারালো তলোয়ারের মতোই। সে হোক কবিতা, গল্প কিংবা উপন্যাস।
কর্মজীবনেও তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমুখী কাজের জন্য সমাদৃত হয়েছেন। অভয়নগর উপজেলায় তিন লাখ তালের চারা রোপণ, সোস্যাল মিডিয়ায় আহ্বানের মাধ্যমে হাজারো মানুষ নিয়ে খালের কচুরিপানা অপসারণ ও শরীয়তপুরে করোনাকালীন রাস্তায় পড়ে থাকা মুমূর্ষু বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। তিনি শরীয়তপুর গণপাঠাগারটি সংস্কার করেছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষকে পাঠাগার বানাতে চেষ্টা করেছিলেন। এতে গ্রামে বইপড়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
তাই তো সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানিত হয়েছেন বারবার। ২০১৯ সালে ভারতের আরশিকথা পত্রিকার আয়োজনে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে তাকে ‘লেখক সম্মাননা’ দেওয়া হয়। ২০২১ সালে ‘গ্লোব্যাল ইয়ুথ পার্লামেন্টের লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’, ২০২২ সালে ‘শুদ্ধাচার’ পুরস্কার লাভ করেন। ২০২৩ সালে সামাজিক ও মানবিক কাজে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ওয়ার্ল্ড ডিপ্লোম্যাসি ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। উন্মুক্ত পাঠাগার (একুশ) এবং কবিতার দেওয়াল (কাব্যমায়া) প্রতিষ্ঠা করে তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীল ও ইতিবাচক কাজে সম্পৃক্ত করার জন্য এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০২৩ সালে ‘এসবিএসপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছায়েদুল ইসলাম গ্রন্থস্মারক’ অর্জন করেন।
মনদীপ ঘরাই শত ব্যস্ততার মাঝেও সাহিত্যচর্চা করে যাবেন। এমনই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তার কবিতা, গল্প ও উপন্যাসে উঠে আসবে মানুষ। নির্যাতিত ও অবহেলিত মানুষ। তার সাহিত্যের আয়নায় ভেসে উঠবে আশান্বিত মানুষের মুখ। এমন প্রত্যাশা রেখেই শুভ কামনা জানাই বহুমুখী প্রতিভাবান মনদীপ ঘরাইকে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com