বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই গ্রুপের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪টি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয়ে প্রায় তিনটা পর্যন্ত চলে এই সংঘর্ষ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখনও মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে সেনাবাহিনী।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে ববির এক শিক্ষার্থীর পারিবারিক বিরোধপূর্ণ বাড়ি দখল করতে গিয়ে দুই নারীকে হেনস্থা করে বিএম কলেজের সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফি। পরে ববি শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ সময় রাফিকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপর মঙ্গলবার রাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে।
ববি শিক্ষার্থীরা আরও জানান, এ ঘটনার পর ক্যাম্পাস থেকে তিনটি বাসে করে তারা নগরীর বটতলার দিকে রওনা দেন। একপর্যায়ে বটতলা এলাকায় পৌঁছানোর আগেই বাসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অপর দুটি বাস ফিরে আসার সময় তাতেও হামলা চালায় বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের সমন্বয়ককে ববি শিক্ষার্থীরা মারধর করেছে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। হামলা চালিয়ে তাদের অনেক শিক্ষার্থীকে আহত করা হয়েছে।
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সোমবার রাতে বিএম কলেজ সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফিকে মারধর করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বটতলা এলাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রসঙ্গত, বিরোধপূর্ণ জমি দখল নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন করেছে। এ কর্মসূচির পর মঙ্গলবার রাতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গত কয়েকদিন ধরেই উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এক নির্মাণাধীন ভবন নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, নগরীর বাংলাবাজার এলাকার ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের এক নারীর ভবন নির্মাণ বন্ধ করে রেখেছে ওই নারীর প্রতিবেশী একটি পক্ষ। এ বিষয়ে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করে ঘটনাস্থলে এনে কাজ শুরু করার চেষ্টা চালান ওই নারী। ব্রজমোহন কলেজের সমন্বয়কারীদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের ওই বাড়িতে যান একদল শিক্ষার্থী।
খবর পেয়ে ওই নারীর প্রতিপক্ষের মেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ঘটনাস্থলে কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে আসেন। এ সময় মোস্তাফিজকে মারধর করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার মানববন্ধনের আয়োজন করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওইদিকে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজির অভিযোগে মারধর করা হয়। তাদের উদ্ধারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাস নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরে বাসটি ভাঙচুর করে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনার সূত্র ধরে রাত দুইটার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে এসে হামলা-ভাঙচুর চালায়।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজের প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কাজ করছেন।