মদিনা শরিফে টানা ৫০ বছর নামাজ পড়েছেন শায়খ মহিউদ্দিন!

:
: ৩ years ago

শায়খ মহিউদ্দিন। ১০৭ বছরে এ প্রবীণ শায়খকে আর মসজিদে নববিতে নামাজ পড়তে দেখা দেখা যাবে না। মসজিদে নববি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ‘কারবান ও তাজুরি’ এলাকা তার বাড়ি হলেও তিনি নিয়মিত মসজিদে নববিতেই পড়তেন ৫ ওয়াক্ত নামাজ।  প্রতিদিন তিনি নিজ বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে মসজিদে নববিতে এসে নামাজ পড়তেন এবং দীর্ঘ সময় মসজিদে নববিতে অবস্থান করতেন। কুরআন তেলাওয়াত করতেন।

আরবি গণমাধ্যম আল-খালিজ ডটএই’র তথ্য মতে জানা যায়, শায়খ মহিউদ্দিন ছিলেন মদিনা নগরীর প্রবীণদের অন্যতম। ইসলামে দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বংশধর। ইসলামের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আলেম মহিউদ্দিন ইবনে আরাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষ।

শায়খ মহিউদ্দিন সম্পর্কে একট টুইট বার্তায় কিছু তথ্য তুলে ধরেন মক্কা-মদিনার ইসলামি স্থাপনার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আবু মালিক। তিনি জানান, ‘প্রয়াত শায়খ মহিউদ্দিন ছিলেন অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বোল ও কোমল মনের অধিকারী। তিনি সব সময় আল্লাহর জিকির করতেন। কুরআন তেলাওয়াতের সঙ্গে তার ছিল গভীর সম্পর্ক।

টুইটে আরও জানান, ‘কোনো স্ত্রী ও পুত্র ছিল না তার। কোনো একজন দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় তিনি জীবন পরিচালনা করতেন এবং মসজিদে নববির পাশে অবস্থান করতেন।

আবু মালিক বলেন, ‘আমি গত ৩০ বছর ধরে তাঁকে পিঠ বাঁকা করে মসজিদে নববিতে যাতায়াত করতে দেখেছি। মসজিদে নববিতে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আদায় করতেন তিনি। মদিনার পবিত্র হারাম শরিফ থেকে তাঁর বাসার দূরত্ব ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার। মসজিদে নববিতে আসা-যাওয়ায় তার নিয়মিত রুটিন ছিল এমন-

‘তিনি প্রতিদিন ফজরের দুই ঘণ্টা আগে ঘর থেকে মসজিদে নববির উদ্দেশ্যে বের হতেন। জিকির করতে করতে তিনি মসজিদে নববিতে এসে ফরজ আদায় করতেন। মসজিদে নববির বাবুস সালাম গেট দিয়ে তিনি প্রবেশ করতেন। ফজরের নামাজ পড়ে ইশরাক পর্যন্ত মসজিদে নববিতে অপেক্ষা করতেন।

মদিনা নগরীর কারবান ও তাজুরি এলাকা থেকে তিনি প্রায় পায়ে হেঁটে এসে ফজর ও ইশরাক পড়ে ঘরে ফিরে যেতেন। জোহরের সময় হওয়ার আগেই আবার মসজিদে নববিতে এসে পৌছতেন। ইশার পড়ে তারপরই তিনি ঘরে ফিরতেন। মৃত্যুর আগে এটিই ছিল তাঁর নিয়মিত রুটিন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে তিনি এভাবেই মসজিদে নববিতে নামাজ আদায় করেছেন।

মদিনা নগরীর সবচেয়ে প্রবীণ ১০৭ বছর বয়সী শায়খ মহিউদ্দিন গত ১৯ জুন (শনিবার) মদিনায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মসজিদে নববিতেই তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে বাকিউল গারকাদ (জান্নাতুল বাকিতে)-এ দাফন করা হয়।

তার স্মৃতিচারণ করে আবু মালেক আরও জানান, ‘মদিনার হারামের মধ্যে আমি তাঁর সঙ্গে অনেকবার সাক্ষাত করেছি। মহামারি করোনার কারণে মসজিদ নববি দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর খোলা হলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করি। তখন আমাকে দেখে তিনি কেঁদে করে ফেলেন। তাঁর দু’চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তখনও তার মাঝে মসজিদে নববি ও রওজা শরিফে যাওয়ার জন্য তার তীব্র  আকাঙ্ক্ষা ও গভীর ভালোবাসা দেখতে পাই।’

তাঁর মৃত্যু সংবাদটি যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে অনেকেই তার জন্য রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাঁর জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। মসজিদে নববিতে নিয়মিত নামাজ আদায়কারীদের সঙ্গে আর তাকে নামাজ পড়তে ও কুরআন তেলাওয়াত করতে দেখা যাবে না।

আল্লাহ তাআলা শতবর্ষী শায়খ মহিউদ্দিনকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।