মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী

:
: ১ বছর আগে

দেশে যথেষ্ট পরিমাণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থাকার পরও পণ্য মজুত করে মূল্য বাড়ানো অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২১ জুন) দুপুরে গণভবনে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীর ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক সামিট’ এবং কাতারে ‘ইকনোমিক ফোরামে’ অংশগ্রহণ সম্পর্কিত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে শুরুতে তিনি সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু লোক তো থাকে সুযোগসন্ধানী। যুদ্ধের কারণে কিন্তু সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে; পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে, পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে কানাডা থেকে আমরা ২’শ ডলারের গম ৬’শ ডলারে কিনেছি। ৮’শ ডলারের জাহাজ ভাড়া আমাদের প্রায় ৪ হাজার ডলার দিয়ে আনতে হয়েছে।’

‘এটা ঠিক যারা নির্দিষ্ট আয়ের লোক তাদের ওপর চাপ পড়ে। এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আমরা কিন্তু সেসব অনুসরণ করে একটা পদক্ষেপ নিয়েছি।’

 

তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয় ১ কোটি মানুষকে আমরা খাবার সাহায্য দেবো। তাছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যাতে স্বল্প মূল্যে কিনতে পারে সেজন্য টিসিবির মাধ্যমে কার্ডের মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছে দেবো। সেখানে বেশি দামে কিনে ভর্তুকি দিচ্ছি। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে আমরা কিন্তু এ কাজটি করেছি।’

অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য উৎপাদন বাড়ানোর কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকার সত্ত্বেও যখন দাম বাড়ে, কিছু লোক (মজুতদার) ইচ্ছা করে দাম বাড়ায়- তখনই আমাদের কিছু বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হয়।’

‘আমি জানি পেঁয়াজ আছে, কিন্তু ছাড়ছে না। কারণ পেঁয়াজ পচাবে কিন্তু বেশি দামে ছাড়া বেচবে না। যখনই আমদানি শুরু করলাম, ৫ লাখ মেট্রিক টন কিনবো সিদ্ধান্ত নিলাম। দশ হাজার থেকে ১২ হাজার মেট্রিক টন আসতে না আসতেই দাম কমে গেলো। যারা এভাবে মজুত করে কালোবাজারি করার চেষ্টা করে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। নিতে হচ্ছে, আমরা নিচ্ছি।’

মজুতদারদের তথ্য দিতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরাও একটু বের করে দেন কোথায় কোথায় মজুত করে রাখলো। আমরা খুঁজে খুঁজে বের করে নিয়ে নেবো। মানুষের এই কষ্টটা যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নেবো। মানুষের যখন কষ্ট হয় আমরা কিন্তু কিছুই লুকাই না। কাজ তো মানুষের জন্য করি। এজন্য মানুষের কষ্টটা কীভাবে লাঘব করা যায়, সেই পদক্ষেপ নিই।’

ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে সরকার

এসময় অপর এক প্রশ্নে অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে যোগ দেওয়া নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ব্রিকসের আমরা যোগ দেবো এই কারণে, প্রথম যখন ব্রিকস প্রস্তুতি নেয় তখন থেকেই এর সঙ্গে ছিলাম। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হতে পারিনি কিন্তু এখন সদস্য হবো।’

‘আমরা চাচ্ছি যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনও অ্যাক্টের ওপর যেন আমরা নির্ভরশীল না হয়। কাজেই অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যাতে আমাদের অর্থের বিনিময় সুযোগটা থাকে। আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যাতে আমরা সহজেই ক্রয় করতে পারি। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি। সেই সমস্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়েই আমরা ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

শুধু ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে দেখবো বিকল্প কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থ ব্যবহারে কেউ যদি নেয়, আমরা তার সাথে আছি।’

‘এরই মধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি আমাদের নিজস্ব মুদ্রায় যেন ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি। সেই উদ্যোগ নিয়েছি। শুধু ডলারে ওপর নির্ভরশীল না, আমরা নিজেরা নিজেদের অর্থে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিময়টা যাতে করতে পারি। কেনাবেচা যা লাগে করতে পারি।’