ভয়াল ২৫শে মার্চ আজ

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত আজ। ইতিহাসের এই দিনে পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার রূপ প্রকাশ করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ও সেনাবাহিনী। বাংলার মানুষের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার, চলে নির্বিচারে গণহত্যা।

১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের ভয়াবহ এ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ণ সামরিক অস্ত্র নিয়ে রাত ১০টার পর দেশজুড়ে শুরু হয় এই জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নৃশংস নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে পা বাড়ান। ২৫ মার্চ পাকহানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

অস্ট্রেলিয়ার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকা জানিয়েছিল, শুধু ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী নয় মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই ঘৃণ্য ইতিহাসকে।

আজ ভয়াল কালরাত, জাতীয় গণহত্যা দিবস। দিনটি স্মরণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করে বাণী দিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে এর মধ্যেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব, বঙ্গভবনের অনুষ্ঠান ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী স্বাধীনতা দিবসের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

অতর্কিত সেই হামলা প্রতিরোধ করেছিল পুলিশ লাইনের পুলিশ বাহিনী। কিন্তু সেই প্রতিরোধ টেকেনি। পাকিস্তানি বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেও সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ২৫ মার্চের ভয়াবহ সেই কালরাতের হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা যুগিয়েছিল।

এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছেছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখণ্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।

পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এই বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এই বার্তা গ্রহণ করে। চট্টগামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন।

 

এদিকে বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় তার বাসভবন থেকে বন্দি করে শেরেবাংলানগরের সামরিক বাহিনীর সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকে সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়।

জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলায় নিহত সব শহিদকে। এ বছর বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছি। আমরা দেশবাসী জনগণকে যার যার অবস্থান থেকে সেদিনের শহিদদের স্মরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।