দেশের বড় অংশের জ্বালানি নিরাপত্তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। জ্বালানির সংস্থান না করতে পারায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি উত্তরের জেলাগুলোয় শিল্পের সম্প্রসারণ ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব এলাকার মানুষ। এ প্রেক্ষাপটে সারাদেশে গ্যাস সঞ্চালন নেটওয়ার্ক নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। নতুন ১০টি গ্যাস সঞ্চালন লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে জ্বালানি বিভাগ। এ জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৮৬২ কোটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- জ্বালানি বিভাগ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইস্তেহার অনুযায়ী কী কী বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং আগামীতে কী কী বাস্তবায়ন করা হবে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেই প্রতিবেদনে সারাদেশে গ্যাস নেটওয়ার্ক নির্মাণের এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আগামী এপ্রিলের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করতে পারেন বলে জানা গেছে। যদিও এখনও বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করেনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার সুসম উন্নয়ন করতে চায়। এ জন্য সব এলাকার জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি থাকলে উদ্যোক্তারা শিল্প স্থাপন করবেন। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
গ্যাসের সংস্থানের জন্য এলএনজি আমদানিকেই ভরসা বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, আমদানির ক্ষেত্রে দুই ধরনের জ্বালানিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে— একটি কয়লা, অন্যটি গ্যাস। কয়লার পরিবহন জটিল, পরিবেশের জন্যও কয়লা ভালো নয়। সে ক্ষেত্রে গ্যাস তুলনামূলক নিরাপদ এবং পরিবহন অনেকটাই সহজ।
সরকারের এলএনজি আমদানির পরিকল্পনায় বলছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে পাঁচ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট করা হবে। গত বছর থেকে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল গ্যাস দিচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। আগামী মাসে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার আরও একটি টার্মিনাল আসছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির জন্য একটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এটির প্রথম ইউনিট নির্মাণ শেষ চালু হবে ২০২৩ সালে। এরপর ২০৩০ সালে উৎপাদনে আসবে দ্বিতীয় ইউনিট। এতে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ বাড়বে। এর বাইরে পটুয়াখালীর পায়রাবন্দর এলাকায় দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার আরও একটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল করা হবে। আশা করা হচ্ছে ২০৩৫ নাগাদ এটি চালু হবে।
গ্যাসের সঞ্চালন লাইন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আল মামুন বলেন, ‘সারাদেশে গ্যাস সঞ্চালনের নেটওয়ার্ক তৈরি করার বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে। আমাদের কাছে নির্দেশনা আসলেই আমরা কাজ শুরু করবো।’ তিনি বলেন, ‘এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গ্যাস একটি বড় ফ্যাক্টর। গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত হলে সঞ্চালন লাইনের কাজ শুরু করা হবে।’
১০ নতুন সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প
নতুন সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হলো সাতক্ষীরা (ভোমরা) থেকে খুলনার আড়ংঘাটা সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প। এর প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। এটির কাজ আগামী জুলাইয়ে শুরু হওয়ার কথা। এর কাজ শেষ ২০২১ সালের জুনে।
লাঙ্গলবন্দ থেকে মাওয়া এবং জাজিরা থেকে টেকেরহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২১ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুনে এটির কাজ শেষ হবে।
খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জ থেকে টেকেরহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১১৯ কোটি টাকা। এটির কাজ ২০২৩ সালের জুনে শেষ হবে।
ভোলা থেকে বরিশাল গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪ কোটি টাকা। এটি ২০২৫ সালের জুনে শেষ হবে।
টেকেরহাট থেকে ফরিদপুর এবং টেকেরহাট থেকে বরিশাল গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এটি শেষ হবে ২০২৮ সালের জুনে।
পায়রা থেকে বরিশাল গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এটি শেষ হবে ২০৩৪ সালের জুনে।
খুলনা থেকে বাগেরহাট, বাগেরহাট থেকে পিরোজপুর, পিরোজপুর থেকে ঝালকাটি এবং ঝালকাঠি থেকে বরিশাল গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের ব্যয় এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। শেষ হবে ২০৩৫ সালের জুনে।
কুটুম্বপুর বা বাখরাবাদ থেকে মেঘনাঘাট এবং মেঘনাঘাট থেকে হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২২ সালের জুনে।
দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু সেতু (রেলওয়ে) সেকশন গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪২০ কোটি টাকা। এটির কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে।
হাটিকুমরুল থেকে বগুড়া গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি। এটির কাজ শেষ হবে ২০৩৬ সালের জুনে।’