ভোলায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে নিহত ৪, গুলিবিদ্ধ ৯

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে কটূক্তি করা নিয়ে ভোলায় জনতার বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত ও ১০ পুলিশসহ প্রায় দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৯ জন।

এদের মধ্যে আহত প্রায় শতাধিক মুসল্লিকে বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে এবং ৪০ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত ১০-১৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানে হয়েছে।

নিহতরা হলেন- বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদ্রাসাছাত্র মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দেলওয়ার হোসেনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌর সভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪৫), মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজান (৪০)।

জানা যায়, গত শুক্রবার ফেসবুকে রসুল (সা.) নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ পোস্ট করা হয়। এনিয়ে রবিবার বেলা ১১টার দিকে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে সর্বস্তরের তৌহীদ জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। এ বিক্ষোভ মিছিলটি না করার জন্য বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দিন, বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানকে পুলিশ অনুরোধ জানায়। সাধারণ মানুষ আসার আগে বিক্ষোভটি বন্ধ ঘোষণা করতে বলা হয়। তাদের অনুরোধে এ দুই ইমাম সকাল ১০টার দিকেই যে সকল লোক আসছে তাদেরকে নিয়ে দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি সমাপ্ত করেন।

কিন্তু এতক্ষণে বোরহানউদ্দিনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক এসে ঈদগাহে জড়ো হয়। একপর্যায়ে তারা ওই দুই ইমামের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এবং সেখানে থাকা পুলিশের উপর চড়াও হয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্তে ওই মসজিদের ইমামের রুমে আশ্রয় নেয়। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ নিজেদের বাঁচানোর জন্য মুসল্লিদের উপর ফাকা গুলি ছুড়ে। এতে সেখানে থাকা মুসল্লিরা আরো উত্তেজিত হয়ে পুলিশের উপর আক্রমণ চালায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে চার মুসল্লি নিহত হন। ১০ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় দেড় শতাধিক মুসল্লি আহত হন।

আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: ইত্তেফাক

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলা জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বোরহানউদ্দিনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার বলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিপ্লব চন্দ শুভ নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। আমরা হ্যাকের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আটক করেছি। আমরা এ নিয়ে গত রাতে স্থানীয় আলেমদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে আজকের প্রোগ্রাম হবে না। কিন্তু সকাল থেকে আমাদের কাছে খবর আসে সেখানে মাইকিং হচ্ছে এবং স্টেজ বানানো হচ্ছে। সেখানে গিয়ে আমরা উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলেছি।

তিনি আরো বলেন, আমি নিজে সেখানে বক্তব্য দিয়েছি। তারা সবাই আমার বক্তব্য শুনেছে। যখন আমি স্টেজ থেকে নেমে আসি তখন একদল উত্তেজিত জনতা আমাদের উপর হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষার্থে একটি রুমে গিয়ে আশ্রয় নেই। যখন তারা আমাদের রুমের জানালা ভেঙ্গে ফেলছে তখন আমরা প্রথমে শটগানের ফাকা গুলি ছুড়ি। পরবর্তীতে এতে কাজ না হওয়ায় উপরের দিকে গুলি চালায়। এতে আমার জানা মতে একজন পুলিশ সদস্যের বুকে গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়। আমরা আহত অবস্থায় যাদের হাসপাতালে পাঠিয়েছি তাদের মধ্যে তিনজন নিহত হয়েছে। তবে বাকী আরো থাকতে পারে সেটা আমাদের কাছে তথ্য নেই।

জানা যায়, শুক্রবার বিকালে বিপ্লব চন্দ্র শুভ’র নিজের নাম ও ছবি সম্বলিত ফেসবুক আইডি থেকে আল্লাহ ও নাবী করিম (সা.) কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ গালাগাল করা হয়। একপর্যায় কয়েকটি আইডি থেকে ম্যাসেজগুলোর স্ক্রিন শর্ট নিয়ে ফেসবুকে কয়েকজন প্রতিবাদ জানালে বিষয়টি সকলের নজরে আসে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর বিপ্লব চন্দ্র বোরহানউদ্দিন থানায় আইডি হ্যাক হয়েছে মর্মে জিডি করতে আসলে থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিপ্লব চন্দ্রকে তাদের হেফাজতে রাখেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ এক হ্যাকারকে আটক করে।