ভোলা সদর উপজেলায় মো. লিটন ও বজলু নামের দুই ট্রাকচালককে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়া সেই ইউপি সদস্য মো. সালাউদ্দিনসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মারধরের শিকার ট্রাকচালক মো. লিটন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলা ইউপি সদস্যের সহযোগী মো. শাহীন ও মো. সোহাগ এবং অজ্ঞাত আরো ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়।
আজ শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন।
এদিকে, শুক্রবার ভোররাতের দিকে মামলার ৩ নম্বর আসামি মো. সোহাগকে তার বাড়ি ইলিশা চরআনন্দ পার্ট-৩ থেকে প্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও-কে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ভিডিওটিতে দেখা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন একটি কাঠ নিয়ে একজন ট্রাকচালককে বেধম মারধর করছেন।
একপর্যায়ে তাকে বাঁচাতে অন্য একজন চালক এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করেন ইউপি সদস্য। পরে স্থানীয়রা দুই চালককে রক্ষা করেন। এ সময় ওই দুই চালক গুরুতর আহত হন।
মামলার বাদী মো. লিটন এজহারে উল্লেখ করেন, গত বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ভোলা শহরে মালামাল নামিয়ে দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ইলিশা ঘাটের দিকে রওনা দেন।
এসময় ইলিশা সড়কের মহাজনের পোল নামক এলাকায় সামনে থেকে হঠাৎ একটি গাড়ি চলে আসায় ট্রাকটি ব্রেক করেন। এই সময় তার পেছনে মোটরসাইকেলে থাকা ইলিশা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. সালাউদ্দিনও মোটরসাইকেল ব্রেক করতে গিয়ে সামান্য কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যান।
এর পর সালাউদ্দিন মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে এসে ট্রাকটি হঠাৎ ব্রেক করার কারণ জানতে চাইলে চালক লিটন সামনে থেকে আচমকা গাড়ি আসার কথা বলেন। এ কথা শুনে ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন চলে যান।
পরে ট্রাকটি ইলিশা ঘাটে গেলে ইউপি সদস্য সেখানে ট্রাকটির পথরোধ করেন। তিনি চালক লিটনকে গাড়ি থেকে নামকে বলেন। লিটন নেমে আসলে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই একটি কাঠের টুকরা দিয়ে লিটন এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন।
এ অবস্থায় ট্রাকে থাকা লিটনের ফুফাতো ভাই মো. বজলু এগিয়ে আসলে ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন তাকেও মারধর করে গুরুতর জখম করেন। এসময় সালাউদ্দিনের সাথে শাহিন ও সোহাগও লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালান বলে মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়।
এদের মারধরে বজলুর হাত ভেঙে যায় এবং লিটনের হাতের কয়েক জায়গায় রক্তাক্ত জখম হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আহত লিটন ও বজলু ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। তারা বর্তমানে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, এ হামলার ঘটনায় থানায় মামলার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে ভোলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে আহত দুই ট্রাকচালকের শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে হাসপাতাল যান ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। এসময় তিনি ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার ও দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইলিশা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, মামলার ৩ নম্বর আসামি মো. সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।