ভোলার মেঘনা নদীতে একটি জাহাজের ধাক্কায় সিমেন্টের কাঁচামাল বহনকারী এমভি তানভির তাওসিব ২ নামক কোস্টার জাহাজডুবির পর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার লোভে মিথ্যে তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কতিপয় সাংবাদিককে ‘ম্যানেজ’ করার মাধ্যমে প্রভাবিত করে নিউজের মাধ্যমে একটি পক্ষের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে। তানভির তাওসিব ২ এর মাস্টারের এমন একটি অডিও রেকর্ড সংবাদকর্মীদের হাতে রয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেঘনা নদীর বিরবির বয়া নামক এলাকায় কোস্টার জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর এর মাস্টার ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে ভোলা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ভোলা সদর থানায় মামলা করা হয়, মামলা নম্বর ৮৮। তবে পুলিশের কাছে মৌখিক বক্তব্য ছাড়া তেমন কোনো প্রমাণ জাহাজ কর্তৃপক্ষ এখনো উপস্থাপন করতে পারেনি।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঢাকার পপুলার এন্টারপ্রাইজের মো. তোফাজ্জলের মালিকানাধীন এমভি তানভির তাওসিব ২ জাহাজের মাস্টার খায়রুল আলম জানান, গত ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে সিমেন্ট তৈরির প্রায় ২২শ’ টন কাঁচামাল নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল জাহাজটি। এ সময় (দাবি করা হচ্ছে) বসুন্ধরা ফুড ১ নামক খালি জাহাজ ধাক্কা দেয় তানভির তাওসিব ২-কে।
তবে তাদের এ দাবিকে পুরোপুরি মিথ্যে অভিহিত করে বসুন্ধরা গ্রুপ জানায়, তাদের জাহাজটি ওই সময় হাতিয়ায় অবস্থান করছিল।
এদিকে তানভির তাওসিব ২ এর মাস্টার এমন দাবি করলেও তারা কোনো ফুটেজ বা ছবি সংবাদকর্মীদের দিতে পারেননি। পরে এমভি সানিলা নামে একটি জাহাজ তাদের উদ্ধার করে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, রাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে জাহাজটি তাড়াতাড়ি চালাতে গিয়ে মেঘনা নদীর বিরবির বয়া এলাকায় চরে উঠে যায় তানভির তাওসিব ২। পূর্ণ (Spring tide) জোয়ারে জাহাজের ওপর পানি উঠে যায় এবং সেটি ডুবে যায়।
এ বিষয়ে ভোলা সদর থানার ইলিশা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রতন চন্দ্র দাস জানান, জাহাজডুবির একটি অভিযোগে উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মৌখিক অভিযোগে জিডির পর তা মামলা হিসেবে নেওয়া হয়। তবে মৌখিক অভিযোগ ছাড়া তেমন কোনো তথ্য তারা দিতে পারেনি।
এসআই সুজন বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তারা আমাদের মৌখিক অভিযোগ দিয়েছে একটি জাহাজের বিরুদ্ধে, তবে পর্যাপ্ত প্রমাণ এখন প্রর্যন্ত আমাদের কাছে পেশ করতে পারেনি।
একাধিক জাহাজ নির্মাণকারীদের রীতি ও নীতি অনু্যায়ী জানা যায়, এমভি তানভির তাওসিব ২ এর বক্তব্য অনুযায়ী যদি কোনো জাহাজ তাকে ধাক্কা দিয়ে থাকে তাহলে স্ট্যাবিলিটি ক্রাইট্রিয়া অনুযায়ী অন্য দুই হ্যাচে পানি প্রবেশের কথা নয়। হয়তো জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ত্রুটি ছিল এবং অতিরিক্ত/মাত্রাহীন চাপে জাহাজের তলা ফেটে গিয়ে অন্যান্য হ্যাচে পানি ঢুকেছে এবং ডুবে গিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাহাজটির সঠিক বিমা করা নেই, তাই তারা নানাভাবে তৃতীয় পক্ষের ঘাড়ে দায়ভার চাপিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করছে।
এমন ঘটনা ঘটলে মাস্টার বা অন্যান্য স্টাফরা ভিএইচএফ, মাইক, মোবাইলের মাধ্যমে কাছাকাছি সব জাহাজকে জানানোর কথা। এমন কোনো প্রমাণ তারা কারও কাছে দেননি বা থানাকেও দেননি। ঘটনার তিন দিন পর তারা ক্ষতিপূরণের লোভে অপপ্রচার করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে তানভির তাওসিব ২ মাস্টারের এমন অদ্ভুত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বসুন্ধরা গ্রুপ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সরকারের যে কোনো সংস্থাকে বসুন্ধরা ফুড ১ জাহাজটি সরেজমিন পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।