ভোলার লালমোহনের জেডিসি পরীক্ষার্থী তানিয়া অন্ধ মায়ের সঙ্গে ভিক্ষা করার সংবাদ শুক্রবার বরিশাল ক্রাইম নিউজ অনলাইনে প্রকাশ হওয়ার পর ভাগ্য খুলে যায় তানিয়া ও তার মায়ের।
সংবাদটি ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক ও লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুল হাসান রুমির দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।
পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শনিবার তানিয়ার বাড়িতে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ সময় যুগান্তর প্রতিনিধি মো. জসিম জনিও সঙ্গে ছিলেন।
লালমোহন পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের সিকদার হাটবাজারসংলগ্ন তানিয়াদের বাড়ি। বাড়ি বলতে ছোট একটি ভাঙাচোরা খুপড়িঘর। ঘরের দরজা-জানালা জরাজীর্ণ।
ভিক্ষার টাকায় ঘরটি তৈরি করলেও জায়গাটি তাদের নয়। একজন তাদেরকে সেখানে থাকতে দিয়েছে। ভাঙা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন তানিয়ার মা অন্ধ রাশেদা বেগম।
তানিয়াকে পাওয়া গেল উঠানের মাঝে। মা ও মেয়ের সঙ্গে কথা বললেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান রুমি।
ইউএনওকে রাশেদা জানান, মেয়ের পড়ালেখার খরচ জোগাতে আর তিন বেলা খাওয়ার জন্য তাদের ভিক্ষা করতে হয়।
তানিয়া গর্ভে থাকা অবস্থায় তানিয়ার বাবা ছেড়ে চলে যায়। আর ফিরে আসেনি। সেই তানিয়া এবার জেডিসি পরীক্ষা দেবে। পড়ালেখার প্রতি টান দেখে অন্ধ মা রাশেদা শত কষ্ট হলেও মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে আসছেন। অন্ধ হওয়ার কারণে প্রতি বৃহস্পতিবার তানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষা করে বেড়ান লালমোহন বাজারের দোকানে দোকানে।
এসব শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের জন্য একটি বসতঘর বরাদ্দ করে দেন। আগামী ৩ দিনের মধ্যে ঘর তৈরি সম্পন্ন করতে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করেন।
একই সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে তাদের জন্য একটি দোকানের ব্যবস্থা করেন। ২০ হাজার টাকায় দোকান ও দোকানের জন্য ক্ষুদ্র মালামাল কিনে দেন ইউএনও হাবিবুল হাসান রুমি। মঙ্গলবার একসঙ্গে ঘর ও দোকান উদ্বোধন করবেন তিনি।
অন্যদিকে সংবাদটি প্রকাশ হলে বিভিন্ন স্থান থেকে এ প্রতিনিধির কাছে ফোন করে অন্ধ মা রাশেদা ও মেয়ে জেডিসি পরীক্ষার্থী তানিয়ার জন্য সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন অনেকেই।
লালমোহনের বেসরকারি সংস্থা দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মো. ইউনুছ মিয়া একটি ছাগল কিনে দেবেন লালনপালন করার জন্য।
এছাড়া লালমোহন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. নুরনবী ২ বছরের জন্য প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চালের একটি ভিজিডি কার্ড করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।