প্রতি বছর শুকনো মৌসুম আসে। দ্বীপ জেলা ভোলার চরে জ্বলে প্রতিহিংসার দাবানল। চর দখল নিয়ে চলে বিরোধ। মামলা ও হামলায় সাধারণ মানুষের রক্ত স্রোতে লাল হয় মেঘনার কূল। রক্ত লাল হয় চরের সবুজ প্রান্তর। বাড়ে বিধবার মিছিল, পঙ্গুত্ব বহন করে জীবনে বাঁচে বহু লাঠিয়াল। তবুও থামে না চর দখলের প্রতিহিংসার এই প্রতিযোগীতা। শুকনো মৌসুম এলেই চরাঞ্চলে জোতদার, দখলবাজদের তৎপরতা শুরু হয়। দূর্গম চরে আরম্ভ হয় তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর আনাগোনা। এই লাঠিয়াল বাহিনী সবাই সর্বহারা শ্রেণীর। তারা পুরুষানুক্রমে বাঁধা থাকেন ভূস্বামী, দখলবাজ মালিকদের কাছে। সামান্য অর্থের বিনিময়ে নামে চর দখলের মত ধংসাত্মক কাজে। বেঘোরে প্রান হারায়, গুম হয়। ষোড়শীর কপাল ভাঙ্গে তবুও নিরূপায় তারা।
এই জোতদার, মালিক শ্রেনীর থাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য। এ সপ্তাহের শুরুতে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের দূর্গম চর মোজাম্মেলের জমি দখল নিয়ে দু পক্ষে বিরোধ বাঁধে। শুক্রবার ভোররাতে প্রতিপক্ষের হামলায় জখম হয় ২০ জন। অপহৃত ১১ জন। পুলিশ রাতে অপহৃত ১১ জনকে উদ্ধার করে। গতকাল তজুমুদ্দিন থানার ওসি ফারুক আহমেদ জানান, তারা শুক্রবার ৭জন, শনিবার আরও ৩জনকে গ্রেফতার করেছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান তজুমুদ্দিনে ১১টি চর রয়েছে। শীতের শুরুতে চরজহির উদ্দিনে উপজেলা চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর নেতৃত্বে সংকট দেখা দেয়।
তখন প্রতিপক্ষ চরের দখল নিতে গেলে সংঘাত বাঁধে গুরুতর আহত হয় ১০/১৫ জন। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। একই সময় দৌলতখানে চরের আধিপত্য নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দু’পক্ষ তৈরী হাতে থাকে অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। দৌলতখান থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, এখানকার চরগুলো অনেক দূরে দূরে অবস্থিত। মেঘনা বক্ষের একটি চর থেকে আর একটি চরে ট্রলার যোগে যেতে ৫/৬ ঘণ্টা সময় লাগে। ২০১৩ সালে ৩১ আগষ্ট দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করনে সংবাদে প্রকাশ ভোলার ইলিশার চরানন্দ গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলার ৭০টি ঘর ভাংচুর করা হয়।
আহত হয় প্রায় ২৫ জন। গত ১২ ফেব্র“য়ারী ভেলুমিয়া ইউনিয়নের গাজীর চরে দু’পক্ষের চর দখলবাজের সংঘর্ষে আহত হয় ১০ জন। চরের মানুষ জানায় বেশীর ভাগ চরেই বন বিভাগ বনায়ন করে। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, রাজনৈতিক, সামাজিক অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চরের নিয়ন্ত্রন নেয়। বাঁধে সংঘর্ষ। প্রান হারায় সর্বহারা লাঠিয়ালরা। চরের ভূমি রক্তস্নাত হয় ভূমিহীন লাঠিয়ালদের রক্তে। প্রতিবছর ওদের রক্তে বৃত্ত আকার জন্যই অপেক্ষা করে চরের সবুজ প্রান্তর। চরের সবুজ চত্ত্বরে প্রতিবছর লাল বৃত্ত হয় কিন্তু মুক্তি পায় না নিপীরিত শোষিত এই ভূমিহীনরা। কবে থামবে এই রক্তপাত। চরে আসবে শান্তি?