বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এ নির্বাচনে দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি অংশ নেয়নি। জাতীয় পার্টি আড়াই শতাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বেশিরভাগ আসনে প্রার্থীদের নিষ্ক্রীয় দেখা যায়। আবারও নির্বাচন চলাকালীন বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ২২ জন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন।
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনের বাংলাদেশ তৃণমূল বিএনপি মনোনীত সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক এবং খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যান। বিকেল সাড়ে ৩টায় তারা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম ভোর্ট বর্জন করেছেন। তিনি বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেসের হয়ে ডাব প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘বিভিন্ন অনিয়মের কারণে হিরো আলম এই নির্বাচন বর্জন করলেন।’
ভোটে অনিয়ম, এজেন্টদের মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। দুপুর আড়াইটার দিকে মধুপুর প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই ঘোষণা দেন তিনি।
এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভোট সরে দাঁড়িয়েছেন পাবনা-২ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী ও পাবনা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস। ভোট শেষের এক ঘণ্টা আগে সাংবাদিকদের কাছে এ ঘোষণা দেন তারা। লিখিতভাবে তারা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়টি জানাবেন বলেও জানান।
পাবনা-২ আসনে বিএনএম মনোনীত ‘নোঙর’ প্রতীকের প্রার্থী ডলি সায়ন্তনী বলেন, ‘আমার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমি নিজে হাতে কয়েকটা ধরেছি। ধরে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। এরপর ভোট বর্জন করেছি।’
পাবনা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস বলেন, ‘ভোটে কারচুপি, এজেন্ট নিয়োগে বাধা ও জাল ও অবৈধ ভোট প্রদানের অভিযোগে আমি ভোট বর্জন করেছি।’
কক্সবাজারের চারটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনের তিন জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও একজন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দুপুরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তারা।
ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়া প্রার্থীরা হলেন, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর এবং জাতীয় পার্টির ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো।
ঢাকা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাক্তার হাবিবুর রহমানের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচনের জাল ভোট দেওয়া, তার এজেন্টদের মারধোর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে বিকেল ৩টায় নবাবচরে নিজ বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি সরে দাঁড়ানো ঘোষণা দেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনা ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বিকেল ৩টার দিকে প্রেস কনফারেন্স করে সরে দাঁড়ান তিনি। এ সময় তিনি নৌকার প্রার্থী জাল ভোট প্রদান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ে-১ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী রেজাউর রাজী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি ।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য প্রার্থী আলমগীর শিকদার লোটন নির্বাচনে কারচুপি ও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সংসদ নির্বাচন চলার সময়ে দুপুর ২টায় এ ঘোষণা দেন লোটন।
ভোট থেকে সরে দাঁড়ালেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনএমের প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল মতিন। দুপুরে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রার্থী নিজেই। তার অভিযোগ, কেন্দ্রে প্রার্থীকে ঢুকতে না দেয়া, এজেন্টদের হুমকি ও কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে প্রতিপক্ষ।
সিলেট-৪ আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন (সোনালী আঁশ) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ভোটগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি নির্বাচন বর্জনে ঘোষণা দেন তিনি।
লালমনিরহাট-২ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রাথী দেলোয়ার হোসেন দুপুর ১২টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ভোটে ব্যাপক অনিয়ম, জাল ভোট ও পেশি শক্তির প্রয়োগের অভিযোগ করেছেন।
এজেন্ট বের করে দেওয়া, মারধরসহ নানা অভিযোগ এনে বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম আর জামিল হোসাইন (ঈগল) ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবর লিখিত আবেদন দিয়ে তিনি ভোট বর্জন করেন।
কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দুপুরে ভোটগ্রহণ চলাকালে ফেসবুক লাইভে এসে নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজান এবারের নির্বাচনে ফুলকপি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি ও সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক।
নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার, অনিয়ম ও ৫৫টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগে এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন যশোর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন। আজ বেলা ১১টায় নিজের নির্বাচনি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রমাণ হয়েছে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। যে কারণে প্রহসনের নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়িয়েছেন।
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কায়সার আহাম্মদ এবং ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আবুল হোসেন দীপু অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। সকালে অ্যাডভোকেট কায়সার আহাম্মদ গফরগাঁওয়ের ধামাইলে তার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। অপর প্রার্থী আবুল হোসেন দীপু নিজের ফেসবুক পোস্টে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে কায়সার আহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, সকাল থেকে নৌকার সমর্থকরা প্রতিটি কেন্দ্রে ঢুকে ভয় দেখিয়ে ঈগল প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকায় প্রকাশ্যে সিল মারার মহোৎসব করছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নৌকার এজেন্ট এবং কর্মীসমর্থকরা নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রাখছে। প্রশাসনকে জানিয়েও প্রতিকার পাননি তিনি।