ভেজালবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করতে চায় এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বিশেষ করে খাদ্য-ওষুধে ভেজালচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে নিয়মিত রাজধানীসহ সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করবে এ ফোর্স। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে র্যাবের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পর্যাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের অনুরোধ জানানো হবে। র্যাবের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ এ ফোর্সের সদর দপ্তর উত্তরায় দরবারে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পদ ১৩টি হলেও এর ১০টিই শূন্য রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন মাত্র তিনজন। তাই র্যাবের পক্ষ থেকে এ পদে জনবল সংকটের কথা তুলে ধরা হবে।
এ ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ বলেন, যারা খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল মেশাচ্ছেন, খাবারের নামে বিষ খাওয়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হবে। মাদক ও জঙ্গিবিরোধী অপারেশনের পাশাপাশি খাদ্য এবং ওষুধে ভেজালের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরও শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভেজালবিরোধী অভিযান নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনা করতে ম্যাজিস্ট্রেট সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাওয়া হবে।
র্যাবের একাধিক সূত্র জানায়, ম্যাজিস্ট্রেট অপ্রতুলতার কারণে অনেক সময় তথ্য থাকলেও ভেজাল চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় অভিযান চালানোর পরও এ-সংক্রান্ত মামলার আইনি ব্যাপারে ব্যস্ত থাকতে হয় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের। মাত্র তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভেজালবিরোধী অভিযান সুচারূভাবে পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য। যদিও মাদক ও জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালরোধে সক্রিয় হওয়া র্যাবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে র্যাবের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি-দাওয়া ও পদক্ষেপ সামনে আসতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে র্যাব সদস্যদের জন্য ১০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা, যাতে র্যাবের কোনো সদস্য আহত হলে নিজস্ব হাসপাতালে আধুনিক সেবা নিতে পারেন।
আরও তিনটি নতুন ব্যাটালিয়ন :এদিকে র্যাবে যুক্ত হতে চলেছে আরও তিনটি নতুন ব্যাটালিয়ন। এগুলোর কার্যক্রম চলবে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন এলাকায়। তিন ব্যাটালিয়নের মধ্যে কক্সবাজার ও পার্বত্য তিন জেলা নিয়ে গঠিত র্যাব-১৫-এর কার্যক্রম ইতিমধ্যেই গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই এটির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে। এটির নাম হতে চলেছে ‘পাহাড়ি’ ব্যাটালিয়ন। এ ছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা, মোংলা ও দুবলারচর নিয়ে র্যাব-১৬ ও পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা ও কুয়াকাটা নিয়ে র্যাব-১৭ গঠিত হবে। সুন্দরবনসহ দক্ষিণাঞ্চল ঘিরে গঠিত একটি ব্যাটালিয়নের নাম হবে ‘উপকূল’। বর্তমানে সারাদেশে র্যাবের ১৪টি ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম চলছে। নতুন ব্যাটালিয়ন তিনটি চালু হলে তা উন্নীত হবে ১৭টিতে। সাধারণত একেকটি ব্যাটালিয়নে ৬৫০ জনবল সংযুক্ত থাকে।
কর্মকর্তারা বলছেন, নবগঠিত পাহাড়ি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর হবে কক্সবাজারে। কারণ রোহিঙ্গা সংকট ও ইয়াবা ব্যবসার কারণে কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকার পরিবেশ-পরিস্থিতি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের কোনো অশুভ শক্তি বিপদগামী করতে পারে- দীর্ঘদিন ধরে এমন আশঙ্কা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে পাসপোর্ট তৈরির প্রবণতা এবং অপচেষ্টাও রয়েছে। এদিকে ইয়াবার চালান ও ব্যবসা ঠেকাতে সরকার দেশব্যাপী নানা উদ্যোগ নিয়েছে। চালানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান। পরিস্থিতি বিবেচনায় র্যাব টেকনাফে অস্থায়ী ক্যাম্পও স্থাপন করেছে। এ ছাড়া বিবদমান গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের জের ধরে পার্বত্য এলাকায় প্রায়ই রক্ত ঝরছে। তাই কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার নিরাপত্তা আরও সুসংহত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০০৪ সালের ২৬ মার্চ আত্মপ্রকাশ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ওই বছর স্বাধীনতা দিবসে প্যারেডে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে র্যাব জনগণের সামনে হাজির হয়। ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ স্লোগান ধারণ করে র্যাবের যাত্রা শুরু। র্যাব অপারেশন পরিচালনার দায়িত্ব পায় ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল। প্রথম দিন রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা বিধানে র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। একই বছরের ২১ জুন রাজধানীর উত্তরায় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানকে ধরার অভিযান চালানোর মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন কার্যক্রম শুরু করে র্যাব। অপরাধ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন, ভেজালবিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে এ বাহিনীর সাফল্য রয়েছে।