ভুয়া মেজরের ফাঁদ, অতঃপর…

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দামি ফ্ল্যাট ভাড়া নিতেন সৈকত এ নীলয়। কখনো সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কখনো মেজর পরিচয়ে বাহিনীতে চাকরি দেয়ার নামে বেকার, এসএসসি ও এইচএসপি পাস করা ছাত্রদের ফাঁদে ফেলতেন। নিজেকে মেজর প্রমাণের জন্য দেখাতেন ভুয়া পরিচয়পত্র। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা তার ছবি প্রার্থীদের দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের অর্থ। তবে শেষ অবধি রক্ষা পাননি তিনি, পুলিশের এলিটফোর্স র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সামনে থেকে ভুয়া মেজর পরিচয়দানকারী ও প্রতারকচক্রের মূলহোতা সৈকত এ নীলয়সহ (২৬) আটজনকে আটক করে র‌্যাব-২। দুই সেট সেনাবাহিনীর পোশাক, ১১টি মোবাইল, ১৫টি সিমকার্ড, সাড়ে ১১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় তার কাছ থেকে।

ঘটনা সম্পর্কে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার উজ জামান বলেন, এ ধরনের একাধিক প্রতারণার অভিযোগ ও তথ্য সংগ্রহের পর র‌্যাব-২ এর একটি দল তদন্তে নামে। তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার শেরেবাংলা নগরে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সামনে অবস্থান নেন র‌্যাব সদস্যরা। সেখান থেকে প্রথমে ভুয়া মেজর সৈকত এ নীলয়কে আটক করা হয়।

পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মো. জামাল (২৬), সাজ্জাদ হক সৌরভ (২৪), নাজমুল আলম ভূঁইয়া (২৯), মাসুদ মুন্সি (৩৫), শামীম আহম্মেদ (২৮), মাসুদ রানা (২৩), শাকিল আহম্মেদকে (২৭) আটক করা হয়।

র‌্যাব-২ অধিনায়ক জানান, আটকরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার নাম করে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিত। সৈকত এ নীলয় এই চক্রের প্রধান হোতা, তিনি এই চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর কর্মরত একজন মেজর হিসেবে পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন মানুষের কাছে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা অবস্থায় নিজের ছবি দেখাতেন। তার অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষ বিশ্বাস করতো যে তিনি সেনাবাহিনীতে একজন কর্মরত মেজর।

‘নীলয় প্রাথমিকভাবে প্রার্থীদের সেনাবাহিনীতে চাকরি দিতে পারবেন বলে জানাতেন। রাজি হলে মোটা অংকের টাকা দাবি করতেন। টাকা পরিশোধ হলে পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর ভুয়া নিয়োগপত্রে নিজের স্বাক্ষর বসিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশী ব্যক্তির কাছে নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দিতেন।’

র‌্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বলেন, আটক সাজ্জাদ হক সৌরভ (২৪) নিজেকে ডিজিএফআই’র অফিসারের পরিচয় দিতেন। তিনি চাকরি প্রত্যাশী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভালো ভেরিফিকেশনের জন্য মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন।

সৈকত এ নীলয়ের পরামর্শে আটক সাজ্জাদ হক সৌরভ ডিজিএফআই’র মনোগ্রাম ও সিল ব্যবহার করে চাকরি প্রত্যাশী ব্যক্তির কাছে ডাকে অথবা কুরিয়ারের মাধ্যমে ভেরিফিকেশনের ভুয়া সার্টিফিকেট পাঠাতেন।

জামাল পেশায় ড্রাইভার। গাড়ি চালানোর পাশাপাশি এই চক্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার কাজ ছিল সাধারণ মানুষের ফাঁদে ফেলে, সেনাবাহিনীর বড় কর্মকর্তা তাহার আত্মীয় ও আকর্ষণীয় বেতনের কথা বলে লোভে ফেলা। কখনও কখনও গাড়ি চালানোর পাশাপাশি খোসগল্পের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলতেন। তার মূল কাজ ছিল সাধারণ ছাত্র, বেকার যুবক, দরিদ্র ছাত্রদের ভুয়া মেজরের (সৈকত এ নীলয়) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া।

নাজমুল আলম ভূঁইয়া নিজেকে মেজরের পিএস হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি চাকরিতে নিয়োগপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা বিকাশে, কুরিয়ারের মাধ্যমে লেনদেন করতেন। বেশি অংকের টাকা হলে অপর আটক মাসুদ, শামীম, মাসুদ রানা ও শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তাদের গার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হত। তারা সবাই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সক্রিয় সদস্য। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।