ভুয়া ডাক্তারের অস্ত্রোপচারে প্রাণ গেল দিনমজুরের

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চুন্নু বেপারীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছিল। পঙ্গু হাসপাতালের সামনে এক দালালের খপ্পরে পড়ে তার স্বজনরা চুন্নুকে নিয়ে যান কলেজগেট এলাকার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে প্রায় ১২ ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় তাকে। এ সময় রক্তক্ষরণে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। এর পর বুধবার সকালে তার অস্ত্রোপচার শুরু করে দুই ভুয়া চিকিৎসক। এরই মধ্যে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায় ওই হাসপাতালে। চুন্নুসহ অন্য রোগীদের উদ্ধার করে পাঠানো হয় পঙ্গু হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে গভীর রাতে চুন্নুকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এভাবে ভুয়া চিকিৎসকের হাতে পড়ে প্রাণ হারালেন চট্টগ্রামের দিনমজুর চুন্নু।  র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, দালালরা সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীদের ভুলভাল বুঝিয়ে নিয়ে যেত ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। সেখানে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে রোগীদের অস্ত্রোপচার করা হতো। দরিদ্র-অসহায় রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো লাখ লাখ টাকা।

বুধবারের অভিযানে দুই ভুয়া ডাক্তারসহ সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও হাসপাতালটির মালিককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। হাসপাতালটির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। মৃত চুন্নুর ভাই হারুন ব্যাপারী জানান, তার ভাই পেশায় দিনমজুর ছিলেন। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের স্টেশন রোডে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মক আহত হন। ওই রাতেই তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করার উদ্দেশ্যে আনা হয়। পঙ্গু হাসপাতালের সামনে একজন আসে শুভাকাঙ্ক্ষীর মতো। সে জানায়, পঙ্গু হাসপাতালে রোগীর সুচিকিৎসা হবে না। পাশেই একটি ভালো হাসপাতাল আছে। স্বল্প খরচে সেখানে ভালো চিকিৎসা মিলবে।

এমন কথার ফাঁদে পড়ে চুন্নুকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় তাকে ভর্তি করার পরই এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। অনেক কষ্টে ৬০ হাজার টাকা দেন তারা। বুধবার সকালে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ডাক্তার আসে না, অস্ত্রোপচারও হয় না। এভাবে কয়েক ঘণ্টা তাকে সেখানে ফেলে রাখার পর দুপুরে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। এর মধ্যে র‌্যাব সেখানে অভিযান চালায়। র‌্যাব জানায়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিপরীতে নুরুজ্জামান সড়কের ২২/২ নম্বর ভবনে ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অবস্থান। সেখানে রোগীদের ভুল চিকিৎসা ও ভুয়া ডাক্তার দিয়ে অস্ত্রোপচারের খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে অভিযান চালানো হয়। এ সময় দোষ স্বীকারের ভিত্তিতে হাসান ও আনোয়ার নামে দুই ভুয়া ডাক্তারকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এরা দু’জন উচ্চ মাধ্যমিক পাস।

অথচ ডাক্তার সেজে অস্ত্রোপচার করে আসছিল। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক সোহাগকে এক বছর এবং টেকনিশিয়ান মিঠুন সরকার, আবু ইউসুফ, পঙ্কজ ও ইসমাইলকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযানের সময় ক্রিসেন্ট হাসপাতালের মালিক নুরুন্নবী পালিয়ে যান। তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।  ম্যাজিস্ট্রেট জানান, অভিযানের সময় হাসপাতালে ২২ জন রোগী ছিলেন। পরে তাদের পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই রোগীদের মধ্যে ভুল চিকিৎসার কারণে পা নষ্ট হয়ে যাওয়া শিশুও রয়েছে। তার পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে একজন রোগী থাকলেও কোনো ডাক্তার পাওয়া যায়নি। অভিযানে র‌্যাব-২ এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ২১ মার্চ রোগ নির্ণয় পরীক্ষায় মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক ব্যবহারসহ কয়েকটি অপরাধে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।