পহেলা বৈশাখ সকালটা বাংলাদেশ তথা বাংলাভাষীদের জন্য সবসময়ই উসবমুখর। তবে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের জন্যও এবারের পহেলা বৈশাখের সকাল ছিল অন্যরকম।
বৈশাখের দিন সকাল প্রায় সোয়া ৬টায় লোটে শেরিং স্বস্ত্রীক ও তার সফর সঙ্গী ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তানভী দর্জিসহ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন চ্যানেল আই সুরের ধারা আয়োজিত ‘৮ম বাংলা নববর্ষ উৎসব হাজাও কণ্ঠে বর্ষবরণ ১৪২৬-এর অনুষ্ঠানে।
তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেন এমপি, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিভা গাঙ্গুলী দাস, বর্ষবরণ উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড লিভার আয়ুশের পক্ষে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও কেদার লেলে এবং ডিরেক্টর, ব্র্যান্ড এন্ড মার্কেটিং নাফিস আনোয়ার প্রমুখ।
এ সময় লোটে শেরিংকে উৎসবের উত্তরীয় পরিয়ে দেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ। তিনি প্রায় ঘন্টাব্যাপি বর্ষবরণ উৎসব উপভোগ করেন। তার সম্মানে সংগীত পরিবেশন করেছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং সারাদেশ থেকে আগত হাজারও শিল্পী।
বাংলা ও ভুটানের ভাষায় ‘রাঙামাটির রঙে চোখ জোড়ালো’ গানটি পরিবেশন করেন সেরাকণ্ঠখ্যাত কোনাল।
এরপর লোটে শেরিংকে মঞ্চে নিয়ে আসেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ও সুরের ধারার চেয়ারম্যান রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তখন উৎসব এবং সুরের ধারার পক্ষ থেকে লোটে শেরিংকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং তিনি লোটে শেরিংয়ের হাতে ‘শ্রুতি গীতবিতান’ তুলে দেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে চমৎকার আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে লোটে শেরিং বাংলায় বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে আমার মন থেকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এ সময় তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার পান্তা ভাত খাইয়েছেন?
আমি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর ঢাকায় এফসিপিএস করেছি। আসলে আমার মন উত্তেজনাপূর্ণ মুহুর্ত অনুভব করছে কখন ময়মনসিংহ যাব।’
বাংলায় তাঁর মুগ্ধকর কথা শুনে উপস্থিত সবাই আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে একযুগে করতালি দিয়ে বাংলাদেশের বন্ধু লোটে শেরিংকেও শুভেচ্ছা জানান।
প্রতি বছরই বর্ষবরণ উৎসবের একটা প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘লোক সুরে বাংলা গান’। বর্ষবরণ উৎসবে গান করেছেন তপন চৌধুরী, দিনাত জামান মুন্নী, মাকসুদ-সহ চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ, ক্ষুদেগানরাজ, গানের রাজা ও বাংলার গানের শিল্পীরা। ছিল নৃত্য পরিবেশনা এবং আবৃত্তি পাঠ।
উৎসবে একদল তরুণীর অংশগ্রহণে ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়। মেলার স্টলগুলো শোভা পায় বাঙালির হাজার বছরের বিভিন্ন ঐতিহ্যের উপাদান, বৈশাখের হরেক রকম পণ্য সামগ্রী। আরো ছিলো পিঠা-পুলি, মাটির তৈরি তৈজস, বেত, কাঁথা, পিতল, পাট-পাটজাত দ্রব্যের জিনিসপত্রসহ রকমারি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ নানান পণ্য সামগ্রী। বর্ষবরণ উৎসব উপস্থাপনা করেছেন অপু মাহফুজ, প্রিয়ান ও সাথী। পরিচালনায় আমীরুল ইসলাম ও শহিদুল আলম সাচ্চু।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রাঙ্গণ থেকে বর্ষবরণ উৎসব বিকেল ২টা পর্যন্ত চ্যানেল আই সরাসরি সম্প্রচার করেছে।
এর আগে একই স্থানে ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় অনষ্ঠিত হয় চৈত্রসংক্রান্তি বা বর্ষবিদায় উৎসব ১৪২৫। চৈত্রসংক্রান্তির বিদায় সূর্য মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকলেও যথাসময়েই উদ্বোধন করেন চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ঢাবি’র ভিসি আখতারুজ্জামান, প্রভিসি কবি মোহাম্মদ সামাদ, সুরের ধারার চেয়ারম্যান রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা প্রমুখ।