#

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ কথার নিশ্চয়তা দেবে যে, সে লোকের কাছে কিছু চাইবে না, আমি তার জন্য বেহেশতের নিশ্চয়তা দেব।’ (তিরমিজি)।

সাহাবি কাবিসাহ বলেন, একবার এক অর্থদণ্ডের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে চাপলে আমি সে ব্যাপারে সাহায্য নিতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম। তিনি বললেন, তুমি আমাদের কাছে থাকো। সদকার মাল এলে তোমাকে তা দিয়ে সাহায্য করব।

অতঃপর তিনি বললেন, হে কাবিসাহ! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারও জন্য চাওয়া বৈধ নয় : ১. যে ব্যক্তি অর্থদণ্ডে পড়বে কারও দিয়াত বা জরিমানা দেওয়ার জামিন হবে, তার জন্য চাওয়া হালাল। অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করবে। ২. যে ব্যক্তি দুর্যোগগ্রস্ত হবে এবং তার মাল ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছল অবস্থা ফিরে না আসে। ৩. যে ব্যক্তি অভাবী হয়ে পড়বে এবং তার গোত্রের তিনজন জ্ঞানী লোক এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক অভাবী, তখন তার জন্য চাওয়া বৈধ। আর এ ছাড়া হে কাবিসাহ! অন্য লোকের জন্য চেয়ে খাওয়া হারাম। সে মাল খেলে হারাম খাওয়া হবে। একদা এক আনসারি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সাহায্য চাইতে এলো। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাড়িতে কি কিছুই নেই? লোকটি বলল, অবশ্যই আছে। আছে একটি কাপড়, যার অর্ধেক পরি ও অর্ধেক বিছাই। আর একটি বড় পাত্র, যাতে পানি পান করি।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিয়ে এসো সেই দুটিকে। লোকটি সে দুটি হাজির করলে আল্লাহর রসুল তা হাতে নিয়ে বললেন, এ দুটি কে কিনবে? এক ব্যক্তি বলল, আমি এক দিরহাম দিয়ে কিনব। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বললেন, কে এক দিরহামের চেয়ে বেশি দেবে? এ কথা তিনি দুই অথবা তিনবার বললেন। তারপর এক ব্যক্তি বলল, আমি দুই দিরহাম দিয়ে কিনব। তিনি দুই দিরহামের বিনিময়ে ওই জিনিস দুটি বিক্রি করে দিলেন। অতঃপর ওই দিরহাম আনসারিকে দিয়ে বললেন, এর মধ্যে এক দিরহাম দিয়ে তুমি খাবার কিনে তোমার পরিবারকে দাও। আর অন্য দিরহাম দিয়ে একটি কুড়াল কিনে নিয়ে আমার কাছে এসো। লোকটি তাই করল। কুড়ালটি নিয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে উপস্থিত হলো। তিনি নিজ হাতে তাতে একটি কাঠের বাঁট লাগিয়ে দিয়ে বললেন, যাও এটা দিয়ে কাঠ কাটো এবং তা বিক্রি কর। আর যেন আমি পনের দিন তোমাকে না দেখতে পাই। লোকটি নির্দেশমতো চলে গিয়ে কাঠ কেটে বিক্রি করতে লাগল। অতঃপর একদিন সে তাঁর কাছে উপস্থিত হলো। তখন সে ১০ দিরহামের মালিক। সে তার কিছু দিয়ে কাপড় কিনল এবং কিছু দিয়ে খাবার। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, কিয়ামতের দিন তোমার চেহারায় কালো দাগ নিয়ে উপস্থিত হওয়া থেকে এটা তোমার জন্য উত্তম। আসলে তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও জন্য ভিক্ষা করা বৈধ নয় : ১. অত্যন্ত অভাবী, ২. চূড়ান্ত দেনা বা জরিমানার দায়ে আবদ্ধ অথবা ৩. পীড়াদায়ক খুনির রক্তপণের জন্য দায়ী ব্যক্তি। অন্য এক হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কারও ভিক্ষা করে পাওয়া-না পাওয়ার চেয়ে পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা উত্তম। (বুখারি)। অভাব মানুষের আসতেই পারে। সেই অভাব দূর করার মানসে কেউ রুজিদাতা আল্লাহর দরবারে হাত পাতে। আর কেউ পাতে সৃষ্টির দ্বারে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তির অভাব আসে এবং সেই অভাবের কথা মানুষের কাছে জানায়, তার অভাব দূর করা হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার অভাবের কথা আল্লাহর কাছে জানায়, আল্লাহ তাকে সত্বর অথবা বিলম্বে রুজি দান করেন। (তিরমিজি)।

মুফতি তারিকুল ইসলাম আল আযহারী

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন