ভাষা সৈনিক মতিন নেই কিন্তু তার চোখ দেখছে মাতৃভূমি

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের ভূমিকার কথা সবার জানা। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু তার চোখ আজও দেখছে পৃথিবীর আলো, দেখছে এই সুন্দর মাতৃভূমি।

প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা শিক্ষক ইকবাল ও স্বাস্থ্যকর্মী রেশমা নাসরীনের চোখের কর্নিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। পরে ভাষা সৈনিক মতিনের দান করা দুই কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় ইকবাল ও রেশমার চোখে।

বর্তমানে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের দান করা চোখ দিয়েই শত শত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন শিক্ষক ইকবাল কবীর এবং স্বাস্থ্যকর্মী রেশমা নাসরীন করছেন স্বাস্থ্য সেবা।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবরে সাতাশি বছর বয়সে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত অসুস্থতায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে জান ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন। মৃত্যুর পূর্বে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই নিজের দেহ দান করে যান চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য এবং তার চোখ দুটি দান করে দিয়ে যান সন্ধানীকে।

ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর গ্রামের মো: বারেক মেলেটারীর মেয়ে রেশমা নাসরীন। রেশমা সুয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের একজন স্বাস্থ্যকর্মী। স্বামী আব্বাস আলী একজন ব্যবসয়ী। মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার চর আজিমপুর গ্রামে রেশমার শ্বশুর বাড়ি। রেশমা স্বামী ও ১২ বছরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদুস মিমি এবং ৪০ দিন এর ছেলে সন্তান রাইয়ান বিন আয়ানকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন।

রেশমা জানান, আমি এখন দু’চোখ দিয়েই দেখতে পাই। যদিও আমার চশমা লাগে। তারপরও এটা আমার পরম সৌভাগ্য, যে ‘আমি শুধু একটি নতুন চোখই পাইনি, আমি একজন ভাষা শহীদের চোখ পেয়েছি’। ভাষা মতিন শুধু বায়ান্নর ভাষা আন্দলনের সাহসী সৈনিকই নয় তিনি ছিলেন, এক অন্যরকম মানুষ। অহঙ্কারমুক্ত, লোভ লালসাহীন একজন সহজ-সরল মানুষ। ক্ষমতার মোহ তাকে কখনো কাবু করতে পারেনি। তিনি ইচ্ছে করলে অনেক এমপি-মন্ত্রীদের মত বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেন নাই। সাধারণভাবে জীবন কাটিয়েছেন। আমি আমার দুই সন্তানকেও ভাষা মতিনের আদর্শে গড়ে তুলব।

রেশমা দুঃখের সাথে আরো বলেন যে, আমার চোখ ভালো হওয়ার পরই আমার ইচ্ছা ছিল আমি ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের পরিবারের সাথে দেখা করব, তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাব। কিন্তু আজও আমি ভাষা মতিনের পরিবারের সঠিক ঠিকানা পাই নাই। তবে আমি আশা ছাড়ি নাই আল্লাহ চাইলে ঠিকই একদিন দেখা হবে।

সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন এর অন্য আরেকটি কর্নিয়া পাওয়া মো: ইকবাল কবীর ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার বাংলাবাজার চাঁদগাজী স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন।