ভারপ্রাপ্ত কারা ডিআইজির বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগটি খারিজ

:
: ৭ years ago

বরিশালের আদালত পাড়ায় এক মামলার নারী বাদী ও আইনজীবীর বক্তব্যে বিচারের নিভৃত বাণীর কান্নার দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে এবার। বরিশাল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কারা ডিআইজি ও বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার আজিজুল হক সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার খারিজ হলে তাদের বক্তব্যে ছিল দীর্ঘশ্বাস। মামলার বাদী কারারক্ষী সাম্মি আকতার ও তার আইনজীবী এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ইমন সাংবাদিকদের বলেন, ১৩ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমণ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলাকালীন ভারপ্রাপ্ত কারা ডি আইজি সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ দাখিল করা হয়। ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা জজ সুদীপ্ত দাস মামলার বাদী ও ভিকটিমের জবানবন্দী না শুনেই পরেরদিন শুনানীর জন্য রেখে দেন।

অভিযোগ দায়েরের বিষয় আদালত হতে বিকেলের মধ্যেই অভিযুক্তদের কাছে খবর চলে যায়।বিকেলে কারা সুপারের অধীনস্থ জেলার বদরুদ্দোজা ও ডেপুটি জেলার মনির হোসেন আদালতে এসে বিচারকসহ ওই আদালত সংশ্লিষ্টদের সাথে সাক্ষাত করে কপি দেখে অভিযোগের নোট নিয়ে যায়। বাদী ও তার আইনজীবী বিভিন্ন মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পারেন। রাতে কারারক্ষীদের মাধ্যমে বাদীকে মামলা না হওয়া সহ চাকুরীচ্যুত করার ব্যাপারে হুমকি দেয়া হয়। ১৪ নভেম্বর সকালে মামলার শুনানী হয়। আদালতের বিচারক ভিকটিমের জবানবন্দী গ্রহণ শেষে দায়েরকৃত অভিযোগের সাথে দাখিলকৃত হাসপাতালের ছাড়পত্রে ওষুধের নাম লেখা না থাকার অজুহাতে মামলাটি সরাসরি খারিজ করে দেন। জেল সুপার ও জেলারের তদবীরে বিচারক প্রভাবিত হয়ে মামলাটি খারিজ করেছেন বলে বাদী ও আইনজীবী মিডিয়ার সাক্ষাতকারে অভিযোগ তোলেন।

এ ব্যাপারে ন্যায় বিচার দাবী করে তারা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করবেন বলে মত প্রকাশ করেন। মামলার শুনানীতে বাদীর পক্ষে অংশ নেয়া বরিশাল আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাচ্চু বলেন, মামলার সত্যতা যাচাইয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটি তদন্ত দাবী করা হলেও বিচারক মেডিকেলের ছাড়পত্র মূখ্য বিবেচনায় নিয়ে কোন প্রকার হেতু ছাড়াই সরাসরি খারিজ করে দেন। মামলায় উচু মহলের তদবির হয়েছে বলে শোনা গেছে। তবে কারা কিভাবে তদবির চালিয়েছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই। মামলার বিষয়ে উচ্চ আদালতে গেলে মামলা অবশ্যই গ্রহণ হবে। অপরদিকে আদালত সূত্র জানায়, ১৩ নভেম্বর সোমবার এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ইমনের মাধ্যমে কারারক্ষী সাম্মি আকতার মামলার অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে কারা সুপার আজিজুল হক সহ তার অপকর্মের সহযোগী কারারক্ষী নিজাম ও শেখ ফরিদকে অভিযুক্ত করা হয়।

বাদীর অভিযোগ:-
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে সাম্মি বলেন, নিজামের বাড়ি বরিশাল হওয়ার পরেও সুপারের সহায়তায় তিনি বরিশাল কারাগারে চাকুরী করে।কারা সুপার আজিজুলের স্ত্রী ঢাকায় চাকুরী করায় আজিজুল বরিশালে বাসায় একা থাকে।সাম্মী ঢাকা থেকে বদলী হয়ে গত ১২ জানুয়ারি বরিশালে এসে সুপারের কাছে রিপোর্ট করে।আজিজুল ১৫ জানুয়ারি সাম্মিকে ঝালকাঠি জেলা কারাগারে পোষ্টিং দেয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে প্রেষণে বরিশাল কারাগারে এনে কারাভ্যন্তরে কোন দায়িত্ব না দিয়ে বন্দী সাক্ষাত স্লিপ কাটার দায়িত্ব দেয়।প্রায়ই আজিজুল তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে অন্যত্র বদলী ও চাকুরী হারাবার ভয় দেখিয়ে সরাসরি কুপ্রস্তাব দেয় এবং যৌন নিপীড়ন করে।

লোকলজ্জা ও ইজ্জতের ভয়ে বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করলেও আজিজুল আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গত ১৮ অক্টোবর রাত ৯ টায় অভিযুক্ত নিজাম ও শেখ ফরিদ তার বাসায় এসে বন্দী সাক্ষাৎ স্লিপের হিসেব দেয়ার জন্য সুপার বাসায় ডাকে বলে জানায়।বাসায় যেতে রাজী না হলে নিজাম ও ফরিদ জোরাজুরি করে চাকুরীর ক্ষতি করার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে সাম্মী অভিযুক্তদের সাথে কারাগারের পাশে আজিজুলের বাসায় যায়। নিজাম ও ফরিদ বাহিরে পাহারায় থাকে।আজিজুল তাকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ চেষ্টা করে। ডাক চিৎকার দিলে অন্য কারারক্ষীরা ছুটে আসলেও উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ হওয়ায় কেহ আজিজুলের বাসায় যেতে সাহস পায়নি। দু/একজন যাওয়ার চেষ্টা করলে নিজাম ও ফরিদের বাধা পেয়ে ফিরে যায়। সাম্মি ধস্তাধস্তি করে খাট থেকে নিচে পড়ে বুকে আঘাত পেয়েও দৌড়ে নিজের বাসায় চলে আসে। ২০ অক্টোবর শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়।

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কারা সুপার সাম্মিকে অন্যত্র বদলী ও চাকুরী খেয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। একইসাথে জেলার বদরুদ্দোজাকে বাসভবন তালা মেরে রাখার নির্দেশ দেয়। জেলার সাম্মির বাসায় তালা মেরে রাখে। সাম্মি নিজ বাসায় যেতে পারছেনা। এভাবে অভিযোগ দাখিলের পর আদালত অভিযোগ শুনানীর জন্য রেখে দেন। ১৪ নভেম্বর শুনানি শেষে মামলার গ্রহণ যোগ্যতা না থাকায় খারিজ করে দেয়া হয় ।