ভারত-পাকিস্তান কার হাতে কত অস্ত্র?

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ভারতের ৪০ জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হওয়ার ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের হুমকি চলছে। দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের হাতেই রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভয়াবহ আঘাত হানতে পারে এসব অস্ত্র। ভারতের হাতে আছে অগ্নি-৩, ব্রহ্মাসহ ৯ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলোর পাল্লা ৩ থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার। অন্যদিকে পাকিস্তানের হাতে আছে শাহিন-২ ক্ষেপণাস্ত্র। এর পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটার। এ ছাড়া আছে ১৪০ থেকে ১৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড। ভারতের হাতে আছে এমন ১৩০ থেকে ১৪০টি অস্ত্র। দুই দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকায় তা ব্যবহারের ঝুঁকিও আছে। দক্ষিণ এশিয়ার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাজেট, পারমাণবিক সক্ষমতা, সামরিক, বিমান ও নৌবাহিনীর তুলনামূলক একটি চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা।

সামরিক বাজেটে কে এগিয়ে
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ১৪ লাখ সেনাসদস্যের জন্য ২০১৮ সালে ভারত সামরিক খাতে বরাদ্দ করেছিল চার ট্রিলিয়ন রুপি (৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই পরিমাণ অর্থ দেশটির জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তান তার ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ সেনাসদস্যের জন্য গত বছর ১ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি (১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাজেট বরাদ্দ করেছিল, যা দেশটির জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ইসলামাবাদ ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি সামরিক সহায়তা পেয়েছে।

১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের বার্ষিক সরকারি ব্যয়ের ২০ ভাগের বেশি সামরিক খাতে ব্যয় হতো। এটি স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে সরকারি খাতের শতকরা ১৬.৭ ভাগ খরচ হয়েছে সামরিক খাতে। তুলনামূলকভাবে ২০১৮ সালে ভারতে সামরিক খাতে সরকারি খরচের পরিমাণ শতকরা ১২ ভাগের নিচে রয়েছে। ২০১৭ সালে তা ছিল শতকরা ৯.১ ভাগ।

ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র কার বেশি?
ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের হাতেই আছে ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলো পারমাণবিক অস্ত্র। ভারতের আছে ৯ ধরনের অপারেশনাল ক্ষেপণাস্ত্র। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) তথ্যমতে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র হলো অগ্নি-৩। এর পাল্লা ৩০০০ কিলোমিটার থেকে ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

অন্যদিকে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি গড়ে উঠেছে চীনের সহায়তায়। তাদের রয়েছে মোবাইল শর্ট এবং মধ্যম পাল্লার অস্ত্র। সিএসআইএস বলছে, এসব অস্ত্র ভারতের যেকোনো স্থানে হামলা চালাতে সক্ষম। তাদের হাতে রয়েছে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র তার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হলো শাহিন-২। শাহিন-২ পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যেটি দুই হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

এসআইপিআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, পাকিস্তানের ১৪০ থেকে ১৫০টি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র আছে। অন্যদিকে ভারতের আছে ১৩০ থেকে ১৪০টি।

কোন দেশের সেনাবাহিনীর শক্তি কত?
আইআইএসএসের তথ্যে বলা হয়েছে, ১২ লাখ সদস্যের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী আছে ভারতের। বাহিনীর সহায়তায় আছে যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েনযোগ্য ৩ হাজার ৫৬৫টির বেশি ট্যাংক, ৩ হাজার ১০০টি পদাতিক বাহিনীর যুদ্ধযান, ৩৩৬টি সশস্ত্র বাহিনীর যান এবং কামান আছে ৯ হাজার ৭১৯টি।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অপেক্ষাকৃত ছোট। বাহিনীর সেনাসদস্য ৫ লাখ ৬০ হাজার। ট্যাংক ২ হাজার ৪৯৬টি, সশস্ত্র পরিবহন যান ১ হাজার ৬০৫টি এবং আর্টিলারি বন্দুক ৪ হাজার ৪৭২টি। তবে এ মাসে এক প্রতিবেদনে আইআইএসএস এ-ও বলেছে, ভারতের কাছে সেনাসদস্য বেশি থাকা সত্ত্বেও তাদের সক্ষমতা কম। কারণ, তাদের পর্যাপ্ত লজিস্টিক, রক্ষণাবেক্ষণ, গোলাবারুদ ও খুচরা যন্ত্রাংশের ঘাটতি রয়েছে।

বিমানবাহিনীর সদস্য কার কত
ভারতের বিমানবাহিনীর সদস্য ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০। যুদ্ধবিমান ৮১৪টি। ভারতের বিমানবাহিনী উল্লেখযোগ্যভাবে বড়, তবে দেশটির যুদ্ধবিমানের বহর নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের বিমানবাহিনীতে আছে রাশিয়ার পুরোনো জেট। যেমন মিগ-২১। এগুলো ১৯৬০-এর দশকে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। এসব জেট বিমান শিগগিরই সরিয়ে ফেলা হবে। অন্যদিকে ২০৩২ সাল নাগাদ ভারতের হাতে আসতে পারে ২২টি স্কোয়াড্রন।
পাকিস্তানের হাতে আছে ৪২৫টি যুদ্ধবিমান। এর মধ্যে রয়েছে চীনা প্রযুক্তির এফ-৭ পিজি এবং আমেরিকান এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট।
আইআইএসএস ২০১৯ সালের এক মূল্যায়নে বলেছে, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।

নৌবাহিনীর সদস্যে কে পিছিয়ে
ভারতের নৌবাহিনীর আছে একটি বিমানবাহী রণতরি। আছে ১৬টি ডুবোজাহাজ, ১৪টি ডেস্ট্রয়ার, ১৩টি ফ্রিগেট, ১০৬টি টহল ও উপকূলীয় যুদ্ধযান এবং যুদ্ধে ব্যবহারযোগ্য ৭৫টি বিমান। তা ছাড়া ভারতের নৌবাহিনীতে আছে ৬৭ হাজার ৭০০ সদস্য।

তবে পাকিস্তানের উপকূলভাগ ভারতের চেয়ে কম। তাদের এ জন্য অস্ত্রের পরিমাণও অত বেশি নয়। তাদের কাছে আছে ৯টি ফ্রিগেট, ৮টি ডুবোজাহাজ, ১৭টি টহল ও উপকূলীয় যুদ্ধযান এবং ৮টি যুদ্ধে ব্যবহারযোগ্য জাহাজ।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকবার। ভারতে জঙ্গি হামলা হয়েছে অনেকবারই। সামস্প্রতিক বছরে এ হামলা আরও বেড়েছে।

*১৯৪৭ সালের অক্টোবরে স্বাধীনতা অর্জনের পর কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য দুই মাস যুদ্ধ হয়েছে।

*১৯৬৫ সালের আগস্টে আবার কাশ্মীর নিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের যুদ্ধ হয়।

*১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন করে ভারত। এ নিয়ে আবার ভারত ও পাকিস্তান জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে।

*১৯৯৯ সালের মে মাসে কারগিলের যুদ্ধে জড়ায় পাকিস্তান ও ভারত।

*২০০১ সালের অক্টোবরে ভারতশাসিত কাশ্মীরে হামলায় নিহত ৩৮ জন। এর দুই মাস পর ভারতের পার্লামেন্টে হামলায় নিহত ১৪ জন।

*২০০৮ সালের নভেম্বর মুম্বাইয়ে জঙ্গি হামলা। মুম্বাইয়ের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন, বিলাসবহুল হোটেলে হামলায় নিহত ১৬৬ জন। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর–ই–তাইয়েবা এ হামলা চালিয়েছে।

*২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ভারতের এয়ার বাসে জঙ্গি হামলা। চার দিন ধরে চলা এ হামলায় ৭ ভারতীয় সেনা ও ৬ জঙ্গি নিহত হয়।

২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গি হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনা নিহত। এরপরই পাকিস্তাননিয়স্ত্রিত কাশ্মীরে ৩০ সেপ্টেম্বর সার্জিক্যাল স্টাইক চালায় ভারতীয় সেনারা। তবে ইসলামাবাদ এ হামলার কথা অস্বীকার করে।

১৪ ফেব্রুয়ারির হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ। এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর ফলে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) ভারতের বিমানবাহিনীর হামলায় ৩০০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের জইশ-ই-মুহাম্মদ, হিজবুল্লাহ মুজাহেদীন ও লস্কর-ই-তাইয়েবার স্থাপনায় এ বিমান হামলা চালানো হয়।

আর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল। পাল্টা জবাব দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাসদস্যরাও। ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে বাধ্য করা হয়েছে ফিরে যেতে। তবে কারও নিহত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে দেশটি।