সামুদ্রিক ইলিশ লবণাক্ত হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলের মিঠা পানির রূপালী ইলিশের কদর একটু বেশি। তাই বরিশাল অঞ্চলের ইলিশের চাহিদা সারা বছর সারা দেশে। দেশের বাইরেও রয়েছে এর খ্যাতি। বরিশাল অঞ্চলের ইলিশের খ্যাতির খবর জানা ছিল কলকাতা থেকে আসা প্রথম পর্যটকবাহী জাহাজ আরভি বেঙ্গল গঙ্গার যাত্রীদেরও।
কলকাতা থেকে ১৯ জন পর্যটক নিয়ে জাহাজ বেঙ্গল গঙ্গা বুধবার দুপুরে ১টা ২৫ মিনিটে বরিশাল নগরীর মুক্তিযোদ্ধা পার্ক সংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএর জেটিতে নোঙর করে। পরীক্ষামূলক এ যাত্রায় বেশির ভাগ যাত্রীই ভারতীয় নাগরিক। এছাড়া লন্ডন, আমেরিকা ও ইতালির ৬ জন পর্যটকও রয়েছেন বেঙ্গল গঙ্গা জাহাজটিতে। বিকেলে তারা বরিশালের চরকাউয়া ও চরআইচাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা বরিশালের ইলিশ সম্পর্কে বিভিন্ন লোকজনের কাছে জানতে চান। ইলিশ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন অনেকে। জেলেদের ইলিশ ধরার কৌশল দেখতে ট্রলার নিয়ে ঘুরেছেন কীর্তনখোলা নদীতেও।
তবে জাটকা সংরক্ষণের উদ্দেশে ইলিশ অভয়াশ্রমে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সময়ের জন্য অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাছ কেনা-বেচা, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একারণে বরিশালের বাজারে ইলিশের সরবারহ নেই বললেই চলে। ইলিশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা আশাহত করে তাদের।
জাহাজে পর্যটকদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা গালফ্ অরিয়েন্ট সীওয়েস লিমিটেডের লজিস্টিক ম্যানেজার মো. নুরুজ্জামান জানান, ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে চালু হতে যাচ্ছে নৌযান যাত্রীসেবা। এরই অংশ হিসেবে পরিক্ষামূলকভাবে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলকাতার খিদিরপুর থেকে ১৯ জন পর্যটক নিয়ে রওনা হয় ভারতীয় এ জাহাজটি। একইভাবে বাংলাদেশের দিক থেকে রওনা দেয়া মধুমতি এখন কলকাতায় অবস্থান করছে।
১৯ জন পর্যটক ও ৩০ জন ক্রু নিয়ে কলকাতার খিদিরপুর থেকে রওনা করা জাহাজটি ভারতের সুন্দরবনের কোলঘেঁষে বাংলাদেশে মোংলা হয়ে প্রথমে কাউখালীতে নোঙর করে। সকালে পুনরায় রওনা দিয়ে দুপুরে বরিশালে এসে নোঙর করে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বরিশাল থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে জাহাজটি। চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জও ঘুরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করবে বেঙ্গল গঙ্গা জাহাজটি। এরপর ৮ এপ্রিল পুনরায় কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওনা দেবে জাহাজ আরভি বেঙ্গল গঙ্গা।
মো. নুরুজ্জামান জানান, জাহাজে থাকা বেশিরভাগ যাত্রীই বরিশালে নেমে ইলিশের খোঁজ করেছেন। তারা ইলিশ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন আমাকে ইলিশ কিনে এনে দিতেও অনুরোধ করেছেন। তবে ইলিশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞার কারণে ইলিশ সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।
বেঙ্গল গঙ্গার যাত্রী ইন্দ্রজিত পাল বলেন, বরিশালের ইলিশের কথা অনেক শুনেছি। এখানকার ইলিশ নাকি অনেক সুস্বাদু। তবে দুঃখের বিষয় ভালো সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও ইলিশ কেনার চেষ্টা করছি।
জাহাজটিতে ভ্রমণ করেছেন আরভি বেঙ্গল গঙ্গার স্বত্বাধিকারী রাজ সিং। তিনি বলেন, যাত্রী অবস্থান ও বিনোদনের জন্য জাহাজটিতে রয়েছে নানা ব্যবস্থা। নদীপথে ভারত-বাংলাদেশের এই যাত্রীসেবা ও ভ্রমণে পর্যটন শিল্পের খুব ভালো ভবিষ্যৎ রয়েছে। আমরা দু’দেশের মধ্যে চলাচলের জন্য নতুন জাহাজ বানানোর কাজ করছি। আমরা চাই কলকাতা থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত সেবা দিতে। এভাবে নৌ-পথে দু’দেশের মধ্যে ভ্রমণ ব্যবস্থা চালু থাকলে ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্পে উভয় দেশই এগিয়ে যাবে।
বরিশাল নৌ বন্দর থানা পুলিশের ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জাহাজ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নগরীর মুক্তিযোদ্ধা পার্ক সংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএর জেটিতে নৌ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাত্রীরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে যাতে ঘুরতে পারেন তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।