ভারতে ৬৯তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপিত

:
: ৬ years ago

প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে শুক্রবার ভারত জুড়ে পালিত হচ্ছে ৬৯ তম প্রজাতন্ত্র দিবস। এদিন রাজধানী দিল্লির বিজয়চকে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এবার প্রধান অতিথি হিসেবে এই প্রথমবারের জন্য উপস্থিত ছিলেন আশিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দশটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এরা হলেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ নাজিব বিন তুন আবদুল রাজ্জাক, লাওস’এর প্রধানমন্ত্রী ড. থংলউন সিসৌলিথ, ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নগ্যুয়েন জুয়ান ফুক, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রয়্যুত চ্যান ওচা, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি হেসেন লুং, কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান সেন, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো,  ব্রুনেইয়ের প্রধানমন্ত্রী দারুসালেম সুলতান হাজি হাসানাল বোলকিয়া মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদুল্লাহ, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দ্যুতার্তে।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি, আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহসহ দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতা এবং বিদেশের সম্মানীয় অতিথিরাও।

এদিন সকাল ১০টা নাগাদ ভারতীয় রাষ্ট্রপতির জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রজাতন্ত্র দিবসের আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ। প্রধানত এদিনই রাজপথে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে দেশটির সেনাবাহিনী। কুচকাওয়াজে অংশ নেয় সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ‘ব্রাম্মোস মিসাইল’। পাশাপাশি ছিল দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন। এরই সঙ্গে যোগ হয়েছিল সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানদের কসরত। এর পাশাপাশি দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এই কুচকাওয়াজে ফুটে উঠেছিল।

প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে চলে প্রজাতন্ত্র দিবসের এই কুচকাওয়াজ। শেষে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠানের সমাপনী হয়।এর আগে সকালে ইন্ডিয়া গেটের সামনে ফুল দিয়ে দেশের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ তিন বাহিনী (স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী)-এর প্রধান।

জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রাজপথের দুই ধার ও আশপাশের এলাকা নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রায় কয়েক হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা নজরদারিতে রাজপথের পাশাপাশি পুরো দিল্লি শহর জুড়ে কয়েক হাজার সিসিটিভি বসানো হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছিল এনএসজি কমান্ডোদের। কোনরকম জঙ্গি-নাশকতা রোধে আকাশেও কড়া নজরদারি চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী।

রাজধানী দিল্লির পাশাপাশি দেশটির অন্যান্য রাজ্যেও জমকালো আয়োজনে পালন করা হচ্ছে প্রজাতন্ত্র দিবস। কলকাতার রেডরোডে (ইন্দিরা গান্ধী সরণি) জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরি নাথ ত্রিপাঠি। সকাল ১০টা নাগাদ শুরু হয়ে প্রায় দেড়ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে এই কুচকাওয়াজ। এই কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, সচিব ও সরকারি কর্মকর্তারা।

এর পাশাপাশি ত্রিপুরা, কেরালা, বিহার, ছত্রিশগড়, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাবসহ প্রতিটি রাজ্যেই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে পালিত হচ্ছে প্রজাতন্ত্র দিবস।

ভারতের বাইরে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতীয় হাইকমিশন ও মিশনগুলিতেও এই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে। প্রথা ভেঙে এবারই প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে বিএসএফ সীমান্তে পাকিস্তানের সাথে সৌহার্দ্য বিনিময় হিসেবে মিষ্টি বিতরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে খবর।

উল্লেখ্য, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ২৬ জানুয়ারি একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫০ সালের এই দিনটিতে সংবিধান কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই দেশ একটি গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয়। সেই থেকে এই দিনটি প্রতিবছরই পালিত হয়ে আসছে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে।