ভারতে বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন চার বিচারপতি

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

দেশের বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েই এবার প্রশ্ন তুললেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের চার সিনিয়র বিচারপতি। শুক্রবার দিল্লিতে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে শীর্ষ আদালতের প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন শীর্ষ আদালতের চার সিনিয়র বিচারপতি ক্যুরিয়েন জোসেফ, জে. চেলারামেশ্বর, রঞ্জন গগৈ এবং দমন লোকু।

দিল্লিতে নিজের বাড়িতেই সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন বিচারপতি চেলারামেশ্বর। সেখানেই একে একে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানান বিচারপতিরা। চার বিচারপতির অভিযোগ বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় অনেক ফাঁক রয়েছে। তার সাথে বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। গোটা ঘটনার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রকে।

বিচারপতিদের অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি যেভাবে আদালত চালাচ্ছেন তা ভারতের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। কারণ তিনি তাঁর ব্যক্তিগত মর্জিমাফিক বিভিন্ন বেঞ্চে মামলা পাঠাচ্ছেন। যেটা আদালতের নিয়ম বিরুদ্ধ। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র পাঁচ বিচারপতির চারজনই পরিস্কার জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতির ওপর তাঁদের আস্থা নেই। বিচারপতিদের এই মন্তব্যে দেশের বিচারব্যবস্থার উপরই ধাক্কা খাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে মানুষের মনে যে শ্রদ্ধা রয়েছে তাও কমবে।

বিচারপতি জে চেমালেশ্বর জানান, ‘আমরা অনেকদিন ধরেই মনে করছি যে আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তাই বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন বলে আমরা মনে করেছি’।

কয়েক মাস আগে এনিয়ে প্রধান বিচারপতিকে একটি ডেপুটেশনও দেন ওই চার বিচারপতি। চিঠিতে তাদের উদ্বেগের কথা জানানো হয়। যদিও তাঁদের দাবি মানতে নারাজ দীপক মিশ্র।
এদিকে দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে শীর্ষ আদালতের চার সিনিয়র বিচারপতির প্রতিক্রিয়ায় গোটা দেশেই সোরগোল পড়ে গেছে। এমন নজিরবিহীন ঘটনায় গোটা দেশই স্তম্ভিত। যারা বিচারব্যবস্থার ধারক ও বাহক-তাদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সব মহলেই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিচার বিভাগকে ঘিরে এই সংকটের পর দেশটির আইনমন্ত্রী রবি শঙ্করের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বাসায় বৈঠকে এসছেন দলের নেতা ও শীর্ষ আইনজীবী সলমন খুরশিদ ও মণিশ তিওয়ারি।

এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞরা। শীর্ষ আদালতের আইনজীবী কেটিএস তুলসী জানান, ‘এটা খুবই আতঙ্কের। নিশ্চয়ই গুরুতর কোন কারণ থাকে যেজন্য সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারপতিরা এই সাংবাদিক সম্মেরন করতে বাধ্য হয়েছেন’।

সিনিয়র আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, মুখ্য বিচারপতির বিরুদ্ধে এটা ভয়ঙ্কর অভিযোগ। এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।

আইনজীবী সলমন খুরশিদ জানান, ‘এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে দু:খিত ও মর্মাহত। একটা প্রবল চাপ তৈরি হয়েছিল বলেই ওই সিনিয়র চার বিচারপতি সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন’।

এদিকে বিচার ব্যবস্থায় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে মোদি সরকারকে তোপ দেগেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।  ট্যুইট করে মমতা লেখেন, ‘আজ সুপ্রিম কোর্টের ঘটনা নিয়ে আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম নিয়ে শীর্ষ আদালতের মাননীয় চার বিচারপতির মন্তব্য-দেশের একজন নাগরিক হিসাবে খুবই দু:খের’। পরের একটি ট্যুইটে তিনি জানান ‘বিচারব্যবস্থা ও গণমাধ্যম গণতন্ত্রের স্তম্ভ। বিচারব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের চরম হস্তক্ষেপ গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক’।