ভারতে পুলিশ স্টেশনে বিক্ষোভের আগুন, গুলিতে নিহত ১ আহত বহু

:
: ৫ years ago

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে টানা কয়েক দিনের মতো আজও বিক্ষোভে উত্তাল দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লি, মেঙ্গালুরু, কলকাতা, লকনৌসহ অন্যান্য বেশকিছু শহর। লকনৌয়ে পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এক বিক্ষোভকারী, আহত হন ২০ জনের বেশি।

এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসব শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ট্যুডে এক প্রতিবেদনে বলছে, বৃহস্পতিবার লকনৌয়ে শত শত মানুষ নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশের ছোড়া বুলেটে বিদ্ধ আহত একজন মারা গেছেন। এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধারের পর দুজনকে মেঙ্গালুরুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Arun Dev@ArunDev1

Police action in Mangalore.

Embedded video

Arun Dev@ArunDev1

Police open fire in Mangalore. Police claims shots were fired in the air and no one has been injured.
Police claims crowd turned violent near port area and started throwing stones. In retaliation they opened fire.
More details awaited

Embedded video

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানী নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করে। দিনভর দিল্লির বিক্ষোভ থেকে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। বেঙ্গালুরুর টাউন হল এলাকা থেকে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। স্বরাজ ইন্ডিয়ার নেতা যোগেন্দ্র যাদবসহ দিল্লির রেড ফোর্ট এলাকা থেকেও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিক্ষোভে উত্তাল দিল্লিতে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিল্লির অন্তত ১৮টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে টানা তৃতীয় দিনের মতো আজও রাজপথে নেমে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসিবিরোধী বিক্ষোভে কলকাতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিক্ষোভে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের তীব্র সমালোচনা করে মমতা বলেন, বিজেপি দেশের একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য খুলির ক্যাপ কিনছে।

মেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার পিএস হার্শা বলেন, বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষে অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া দুই বেসামরিক নাগরিক আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়ায় আমাদের হাতে কোনো বিকল্প ছিল না। সর্বশেষ উপায় হিসেবে আমরা বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছি।

India

তিনি বলেন, প্রথমে আমরা শূন্যে গুলি ছুড়েছি। পরে বিক্ষোভকারীরা আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। এ সময় আমাদের বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।

গত ১১ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল পাস হয়। বিলটি পাস হওয়ার পরদিন রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করায় সেটি আইনে পরিণত হয়। নতুন আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পার্সি এবং জৈন সম্প্রদায়ের সদস্যরা সে দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। তবে এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি।

সমালোচকরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভারতে বিভাজন তৈরি করতে এ নতুন নাগরিকত্ব আইন তৈরি করেছে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।

বিতর্কিত এই আইনে মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কিছু না বলায় ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তবে বিক্ষোভের দাবানল বেশি ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে।

দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের শত শত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এই আইনের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন ধরে টানা বিক্ষোভ পালন করে আসছেন। তাদের এই বিক্ষোভে অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সমর্থন দিয়েছেন।