ভান্ডারিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ’বীর নিবাস’ নির্মাণে বাধা প্রদানের অভিযোগ

:
: ২ years ago

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রসীদের বাধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।

পাশাপাশি ওই ভূমিদস্যু চক্র বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে হত্যার হুমকী ও বিভিন্ন ভাবে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবাবের সদস্যরা।

এমন অভিযোগে বুধবার সকাল ১১ টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মলন করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার পৈকখালী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল খলিফার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তাঁর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল খলিফা ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। তাঁর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে আমার তিন ছেলে আইন শৃংখলা বাহনীতে চাকুরী করছে।

বর্তমানে তাঁরা বরিশাল সহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত। তিনি বলেন, বাড়িতে আমার মৃত. স্বামীর নামে ৭২৯ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মধ্যে বসতবাড়িতেই রয়েছে ৭৫ শতাংশ জমি।

ওই জমিতে আমাদের মোট ৩টি বসত বাড়ি রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃক উপহার স্বরুপ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর উত্তোলন করে দিচ্ছে। আমার স্বামী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় আমাদের বাড়িতে থাকা তাঁর নিজ জমির উপরে সরকার ঘর (বীর নিবাস) নামে উত্তোলন করে দেওয়ার জন্য বরাদ্দ দিয়েছে।

সেই মাফিক সরকারের বরাদ্দকৃত ঘর উত্তোলনে বাধা প্রদান করছে কতিপয় ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে বীর নিবাস উত্তোলনের কাজ শুরু হলেও সন্ত্রাসীদের বাধায় তা বন্ধ রয়েছে।

সরকারের কাজ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধীরা ঘর উত্তোলন বন্ধ করতে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত পিরোজপুর এর এমপি মামলা নং ৫৪৯/২২ (ভান্ডারিয়া) মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় আদালত সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করে।

রায় হওয়ার আগেই চক্রটি কাজ যাতে না করতে পারে সেজন্য সন্ত্রাসীদের দিয়ে বাঁধা সৃষ্টি করছে। বর্তমানে ওই জমিতে ১৪৪,১৪৫ ধারা জারি করেছে আদালত।

মামলা চলমান ও কাজ বন্ধ থাকায় ঘর উত্তোলনের জন্য সরকারি বিভিন্ন র্নিমাণ সামগ্রী পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি আমাদের বাড়িতে থাকা পুরনো একটি টিনের ঘর ও এর জমি দখল করতে একটি চক্র চক্রান্ত শুরু করেছে।

তাঁরা নানা ভয়ভীতি ও আমার সন্তানদের হত্যার হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। আমার মৃত. স্বামী আবদুল জলিল খলিফার নামে দাগ নং ২৫৪১ খতিয়ান নং ১৭৬৩ মৌজা পৈকখালী মোট জমির পরিমান ৭৫ শতাংশ রেকর্ড রয়েছে।

কিন্তু একই বাড়ির ভাশুরের বড় ছেলে বেলায়েত খলিফা বাধা না দিলেও বেলায়েত খলিফার বোন মমতাজ বেগম, তাঁর স্বামী কাদের হাওলাদার, সেজ ছেলে ইব্রাহিম হাওলাদার, মেজ ছেলে গিয়াস হাওলাদার, লতিফ সিকদার, বাচ্চু সিকদার, হাসান সিকদার, বাবুল খলিফা, আবুল কালাম সজীব, রুনু বেগম, নুরু সিকদার মিলে ওই জমি দখল করতে সন্ত্রাসী ভাড়া করে আমার ও আমার সন্তানদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে।

তাঁরা একাধিকবার আমার ও আমার পুত্রবধুদের মারধরও করে। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে মমতাজ বেগম এর বড় ছেলে আবুল কালাম সজীবের বিরুদ্ধে ভান্ডারিয়া থানায় মাদক ও মারামারির একাধিক মামলা রয়েছে।

এছাড়াও হাসান ও বাচ্চু সিকদারের নামে জমিদখল করতে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মারামারির ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। এই ভূমি দস্যু চক্রটি আমার সন্তানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করছে।

অথচ আমার তিন ছেলে আইনের সাথে জড়িত হয়েও তাঁরা আইনের বাইরে কোন কাজ করছেনা। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পরিবার হয়ে আজ গুটি কয়েক লোকের কাছে আমরা জিন্মি।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, এরা শুধু আমাদের বাড়ির জমিই নয় চাষাবাদের জমিতেও হানা দিয়েছে। তাঁরা আমাদের চাষাবাদের জমি দখল করতে গেলে আমরা বাধা দেই।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একাধিক সন্ত্রাসী ও স্থানীয় কতিপয় ভূমি দস্যুদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে জমি হাতানো চেষ্টা করছে। মমতাজ বেগমের চক্রান্তে তাঁর দুলাভাই লতিফ সিদকারকে দিয়ে আমাদের চাষাবাদের জমি নিয়ে মামলা দায়ের করে।

যার মামলা নং ৭৩৭/২২। বর্তমানে এই মামলাটিও চলমান রয়েছে। এবং মমতাজ বেগম ওই এলাকার একাধিক সাধারণ মানুষকে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতে উৎসাহ প্রদান করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য আমাদের হয়রানী করা।

আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও আমরা কোথাও গিয়ে সঠিক বিচার পাচ্ছিনা। জমি থাকলেও আমার সন্তানরা তা ভোগ দখল করতে পারছেনা।

একের পর এক হামলা, হুমকী, আর বিভিন্ন ভাবে মামলা দায়ের করে ছেলে সন্তানদের বাড়ি ছাড়া করার পায়তারা করছে। আমার ছেলেরা বাড়িতে না থাকার সুবাদে মমতাজ বেগম ও তাঁর আত্মীয়রা মিলে একটি চক্র তৈরী করেছে।

এটা তাদের একটা মিশন। বীর মুক্তিযোদ্ধার জমি হাতিয়ে সন্তানদের চাকুরীছাড়া করবে। এদের মধ্যে বিএনপির, জামায়াতের লোকও জড়িত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।